জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনে মোটরসাইকেল চালকরা যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছেন

মহামারি করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কঠোর লকডাউনের খবরে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। তবে আগেই ঢাকার পার্শ্ববর্তী চার জেলায় কঠোর লকডাউন ঘোষণা করায় সাভারে যাত্রীবাহী যানবাহন এবং মানুষের প্রবেশ ও ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে মহাসড়কে যাত্রীবাহী যানবাহনের স্বল্পতা রয়েছে। আর এই সুযোগে অ্যাপ ছাড়াই মোটরসাইকেলে ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছে অনেকেই।

যাত্রীবাহী যানবাহনের স্বল্পতায় পিকআপ, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। পোশাক কারখানা খোলা থাকায় শ্রমিকরা এবার সাভার ত্যাগ করতে পারছেন না। তবে দিনমজুর, রিকশাচালকসহ যারা চাকরির খোঁজে এখনও সাভারে অবস্থান করছিলেন তারা হয়েছেন বাড়িমুখী। 

শনিবার (২৬ জুন) বিকেলে সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, নবীনগর-চন্দ্রা ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড মহাসড়কের সাভার, নবীনগর, বাইপাইল, শ্রীপুর ও জিরানী বাজার বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা যায়, সব টিকেট কাউন্টার বন্ধ। তবে মাইক্রোবাস, পিকআপ ও মোটরসাইকেলে করে ঝুঁকি নিয়ে বাড়তি ভাড়ায় বাড়ি ফিরছে মানুষ। লকডাউনে কাজ বন্ধ থাকার আশঙ্কায় বাড়ি ফিরছেন বলে দাবি গ্রামে ফেরাদের। সকালে যাত্রীর চাপ কম থাকলেও বিকেলে তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানান মোটরসাইকেল চালকরা।

সাভারের নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনে বেশ কয়েকজন মোটরসাইকেল চালক যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছেন। এদের মধ্যে মনির নামে এক চালক ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল থেকে এ পর্যন্ত পাঁচটি ভাড়া মেরেছি। মোটরসাইকেলে সিঙ্গেল পাটুরিয়া গেলে আমরা তাদের কাছ থেকে ৭০০ টাকা ও ডাবল গেলে ১ হাজার টাকা ভাড়া নিচ্ছি। তাদের কোনো অভিযোগ নেই। এই ভাড়ায় তারা রাজি হয়েই যাচ্ছেন। আমরা জোর করে ভাড়া নিই না।

অপর মোটরসাইকেল চালক আজমল বলেন, যাওয়ার সময় কমপক্ষে ৩০টি স্থানে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। প্রতিটি স্থানে একাই বাইক নিয়ে গেলেও পুলিশ আটকে দেয়। যে সব স্থানে পুলিশ বাইক থামায় তার আগেই আমরা যাত্রীদের নামিয়ে দেই। ওই স্থান তারা হেঁটে পার হলে আবার মোটরসাইকেলে তুলে রওনা হই। আমাদের আটকালে আমরা বলি একাই তো যাচ্ছি, আমাদের আটকে লাভ কী? তখন পুলিশ ছেড়ে দেয়।

পিকআপে বাড়ি যাচ্ছে মানুষ

সাভারে থাকা মোজাম্মেল চাকরির খোঁজে নবীনগর থেকে পাটুরিয়া যাবেন। তিনি বলেন, চাকরি হারিয়েছি প্রায় দুই মাস হলো। এই দুই মাস ধরে চাকরি খুঁজছিলাম। চাকরি তো হচ্ছেই না আবার নাকি লকডাউন ঘোষণা করবে। একদিকে চাকরি নাই অন্য দিকে লকডাউন, আমরা খাবো কী? তাই লকডাউনের কয়দিন বাড়িতে থাকবো। এজন্য কষ্ট হলেও বাড়ি যাচ্ছি।

বাইপাইল বাসস্ট্যান্ডের দূরপাল্লার যানবাহনের টিকেট কাউন্টারের সামনে সারি সারি মাইক্রোবাস। এসব মাইক্রোবাসে করে দূরের যাত্রীরা বাড়ি যাচ্ছেন। বাইপাইল থেকে রংপুর পর্যন্ত একেক জনের ভাড়া ১ হাজার ২০০ টাকা। এছাড়াও পিকআপে করেও রওনা দিয়েছে মানুষ।

পিকআপচালক মন্টুর বলেন, সকালে টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে ৪০০ টাকা করে যাত্রী নিয়ে চন্দ্রা থেকে ঘুরে এসেছি। পুলিশ যেতে দেয় না। পরে চন্দ্রার আগেই যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে চন্দ্রা পার হয়ে আবার যাত্রীদের তুলেছি। এভাবে কষ্ট করে যাত্রীদের দিয়ে আসছি। এবারও একইভাবেই যেতে হবে। 

পিকআপে সিরাজগঞ্জ যাবেন মামুলি খাতুন। তিনি বলেন, আমি রিকশার গ্যারেজের রিকশাওয়ালাদের ভাত রান্না করে দিতাম। তারা সবাই বাড়ি যাচ্ছে। আমি একা পড়ে থেকে কী করব? দুপুর থেকে যাওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো গাড়িতে যেতে পারছিলাম না। এবার পিকআপে উঠেছি। কিন্তু চন্দ্রার আগেই নামতে হবে। অনেকটা হেঁটে আবার পিকআপে উঠতে হবে। কষ্ট হলেও বাড়ি যেতে হবে। এখানে তো কাজ নেই।

সাভার হাইওয়ে থানার পরিদর্শক সাজ্জাদ করিম বলেন, কেউ যাতে সাভার ত্যাগ করতে না পারে সেজন্য আমরা মহাসড়কে কাজ করছি। পিকআপে যাত্রী থাকলে তাদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কঠোর নজরদারি পরিচালনা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা বলেন, কঠোর লকডাউনে সবাইকে নিয়ম মেনে চলতে হবে। এক্ষেত্রে পোশাক কারখানা খোলা থাকলে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে হবে। আর পোশাক কারখানা বন্ধ থাকলে কাউকে গ্রামে ফিরতে দেওয়া যাবে না।  এতে করে করোনা আরও বাড়তে পারে।

আরএআর