ঢাকায় যাচ্ছেন মাদারীপুরের ৩০ হাজার বিএনপি নেতাকর্মী
দীর্ঘ ১৭ বছর পর আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ খবরে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা ও জল্পনা। দলীয় প্রধানের আগমনকে ঘিরে প্রস্তুতি সভা করছেন মাদারীপুর জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যে ঢাকায় যাওয়ার জন্য বাস, মাইক্রোবাস ও ব্যান্ডপার্টি ভাড়া করাসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলাজুড়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। মাদারীপুর জেলার পাঁচটি উপজেলা থেকে তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে ঢাকায় যাবেন ৩০ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী। এ জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে প্রায় আড়াই শতাধিক বাস এবং অসংখ্য মাইক্রোবাস।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল, কৃষক দলসহ সব অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আলোচনা সভার মাধ্যমে দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছেন। ইতোমধ্যে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে রাজৈর ও সদর এই দুই উপজেলার জন্য ২২টি বাস এবং অসংখ্য মাইক্রোবাস প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একইভাবে শিবচর, কালকিনি ও ডাসার উপজেলাতেও কয়েক শতাধিক বাস ও মাইক্রোবাস প্রস্তুত রেখেছে বিএনপি। এদিকে যুবদলের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে প্রতিটি উপজেলায় গাড়ি ভাড়া করা হচ্ছে। মাদারীপুর থেকে দুইশো থেকে আড়াইশো গাড়ি ঢাকায় যাবে। এই যাত্রা শুরু হবে ২৪ ডিসেম্বর রাত থেকে। তবে আজ থেকেই অনেকে নিজ উদ্যোগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
মাদারীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মেহেদী হাসান জাকির ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঢাকায় যাওয়ার বিষয়ে কেন্দ্র থেকে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী গতকাল বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারা যেভাবে দিকনির্দেশনা দেবেন, আমরা সেভাবেই তাদের সঙ্গে যাব। আমাদের জন্য এটি খুব আনন্দের বিষয় যে এতদিন পর আমরা আমাদের নেতাকে সামনা-সামনি দেখতে পারব এবং দেশের ভেতর থেকেই নেতৃত্ব পাব। আগে তিনি বিদেশ থেকে নেতৃত্ব দিতেন, অনেক দূরে ছিলেন। এখন আমরা নেতার বক্তব্য খুব কাছ থেকেই শুনতে পারব। ঢাক-ঢোল বাজিয়ে আমরা স্বাগত অনুষ্ঠানে অংশ নেব। আগামী ১২ তারিখের নির্বাচনে আমাদের নেতার বিজয়ের সম্ভাবনা শতভাগ। তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের।
জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান ফুকু ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল ফরিদপুরে বিভাগীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের জেলা থেকে শুধু যুবদলের পক্ষ থেকেই ২২৫টি গাড়ি যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আমাদের সঙ্গে ১০ হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক অংশ নেবেন। প্রতিটি উপজেলায় দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে এবং ইতোমধ্যে স্থানীয় নেতারা গাড়ি ভাড়া করছেন। আমরা ২৫ ডিসেম্বর সকাল ৬টায় এখান থেকে একসঙ্গে রওনা হব এবং সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে ঢাকার বাড্ডা এলাকার ৩০০ ফিট রাস্তা ঢোকার মুখে সমবেত হব। বিএনপি আলাদাভাবে যাবে এবং আমরা যুবদল আলাদাভাবে যাব। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবেও কিছু লোক আজ এবং আগামীকাল ঢাকায় যাচ্ছেন। সবাই শেষে এক জায়গায় জড়ো হব।
বিজ্ঞাপন
এ সময় নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, তারেক রহমান যখন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করবেন, তখন সব অপশক্তি, লুটেরা, ভোটচোর, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের উৎখাত করে একটি সুন্দর দেশ গড়ে তোলা হবে। সেই যাত্রায় আমরা তার সহযোগী হিসেবে পাশে থাকব।
মাদারীপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এবং মাদারীপুর-২ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী জাহান্দার আলী জাহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন মিলিয়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ ঢাকায় যাবেন। ইতোমধ্যে মাদারীপুর-২ আসনের রাজৈর ও সদর উপজেলার জন্য ২২টি বাস এবং অসংখ্য মাইক্রোবাস ভাড়া করা হয়েছে। এই আসন থেকে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের অংশগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে। পুরো জেলার ৫৯টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভা থেকে প্রায় দেড়শো থেকে দুইশো গাড়ি ঢাকায় যাবে। তবে বর্তমানে গাড়ি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা আগামীকাল (২৪ ডিসেম্বর) রাত ১২টার পর সদর, রাজৈর, শিবচর, কালকিনি ও ডাসার উপজেলার সব গাড়ি একত্র করে রওনা দেব। যাত্রীদের জন্য গাড়ির ভেতর খাবারের ব্যবস্থাও থাকবে। ২৫ ডিসেম্বর সকালে আমরা অনুষ্ঠানে অংশ নেব।
মাদারীপুর আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি (একাংশ) মোফাজ্জল হোসেন সান্টু ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিভিন্ন সংগঠন বাস ভাড়া নিচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত মোট কতটি গাড়ি ভাড়া হয়েছে, সে বিষয়ে আমার কাছে নির্দিষ্ট তথ্য নেই। জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে তিন শতাধিক বাস রয়েছে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনের পর ২০০৮ সালে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে দেশ ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে তাকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে আওয়ামী লীগের আমলে বিভিন্ন মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় তিনি দেশে ফিরতে পারেননি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের পর তিনি মামলার দণ্ডাদেশ থেকে মুক্তি পান। বর্তমানে তার মা বেগম খালেদা জিয়া মৃত্যুশয্যায় থাকায় আগামী ২৫ ডিসেম্বর তিনি দেশে ফিরবেন বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
আকাশ আহম্মেদ সোহেল/এআরবি