দুই বছর আগে শেষ হয়েছে সড়কের নির্মাণ কাজ, নওগাঁ-নাটোর রুটে চালু হয়নি বাস
নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। ট্রাক, অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করলেও এ রুটে এখনো যাত্রীবাহী বাস চলাচল শুরু হয়নি। বাস চলাচল না থাকায় যাত্রীদের সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় বেশি হচ্ছে। এ রুটে বাস সার্ভিস চালু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি দুই জেলার আর্থসামাজিক অবস্থার আরও অগ্রগতি হবে। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় দ্রুত বাস সার্ভিস চালুর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
নওগাঁ জেলা থেকে নাটোর জেলা শহরের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। অথচ দুই বছর আগেও সড়ক পথে সেখানে যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। নওগাঁ-আত্রাই-নাটোর মহাসড়ক নির্মাণের জন্য ২০০৫ সালে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদন দেয়। এরপর ২০০৭ সালের জুন মাসে নওগাঁ-সান্তাহার সড়কের ঢাকার মোড় থেকে নাটোরের নলডাঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ৪৮ কিলোমিটার সড়কের মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়। পরে কয়েক ধাপে কাজ এগিয়ে ২০২৩ সালে আঞ্চলিক মহাসড়কের নির্মাণ শেষ হলে এটি চলাচলের উপযোগী হয়। এ আঞ্চলিক মহাসড়কটি ছিল জেলার রানীনগর ও আত্রাই উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা।
বিজ্ঞাপন
নওগাঁর সঙ্গে নাটোরের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল ট্রেন। এছাড়া সড়ক পথে প্রায় ৫১ কিলোমিটার ঘুরে রাজশাহী অথবা বগুড়া হয়ে নাটোর যেতে হতো। এতে সময়, শ্রম ও অর্থের অপচয় হতো। তবে আঞ্চলিক এই মহাসড়ক নির্মাণের পরও কোনো বাস চলাচল করছে না। ফলে অটোরিকশা, প্রাইভেটকার ও ট্রেনই এখন ভরসা। জরুরি প্রয়োজনে অটোরিকশা ও অন্যান্য যানবাহন রিজার্ভ করে চলাচল করতে হয়। বাস চালু হলে জনপ্রতি প্রায় ১০০ টাকা খরচ হবে, যেখানে বর্তমানে অটোরিকশায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে।
সড়কটি চালু হওয়ার পর থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ছোট যানবাহন চলাচলের মাধ্যমে স্থানীয় অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বাস মালিক ও শ্রমিকরা জানান, এক সময় নওগাঁ-রানীনগর ও আত্রাই উপজেলায় ৫২টি বাস চলাচল করত। তবে ২০১২ সালে অজানা কারণে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে বাস সংশ্লিষ্ট অনেকেই বেকার হয়ে পড়েন। নওগাঁ-নাটোর রুটে বাস চালু হলে এ খাতে অন্তত ৫০০ মালিক, চালক ও শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বাস বন্ধ হওয়ার পর ওই রুটে বর্তমানে অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় যাত্রীরা চলাচল করছেন।
আত্রাইয়ের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, নওগাঁ শহর থেকে আত্রাই উপজেলা প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে। বর্তমানে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম অটোরিকশা (সিএনজি), যেখানে যাত্রীদের প্রায় ৮০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। পাশাপাশি ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হয়। বাস চলাচল শুরু হলে ভাড়া কমবে, সময় সাশ্রয় হবে এবং নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
আত্রাই উপজেলার ভরমাধাইমুড়ি গ্রামের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর আগেও আমাদের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম ছিল ট্রেন। বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে আত্রাই আহসানগঞ্জ রেলস্টেশনে গিয়ে ট্রেনে নাটোরসহ অন্য জেলায় যেতে হতো। এছাড়া ভ্যান ও ভটভটির ওপর নির্ভর করতে হতো। এখন গ্রামের পাশ দিয়ে আঞ্চলিক সড়ক হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। সময়মতো হাটবাজারে পণ্য নেওয়া যায় এবং গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। আর ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না।
একই উপজেলার গোনা গ্রামের বাসিন্দা হেলাল বলেন, সড়কটি হওয়ায় আমাদের জীবনমানের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। ছোট যানবাহন চলাচল করছে। তবে বাস চালু হলে সহজেই নাটোর জেলা ও রাজশাহীতে যাওয়া যাবে। বর্তমানে নাটোর যেতে হলে ট্রেন বা মাইক্রোবাস ভাড়া করতে হয়। ট্রেনও সময়মতো পাওয়া যায় না। এ রুটে বাস চালু হলে সবার জন্যই সুবিধা হবে।
নওগাঁ জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি সৈয়দ রেজাউল মোস্তফা কালিমী বাবু বলেন, নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কে বাস চালু করার আগ্রহ রয়েছে। তবে বাসস্ট্যান্ড না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য শহরের পার-নওগাঁ এলাকায় বাস রাখার জায়গা প্রয়োজন। ছোট শহর হওয়ায় এমনিতেই যানজট লেগেই থাকে। নওগাঁ-নাটোর সড়কে বাস চালু করতে হলে আগে বাস রাখার উপযোগী একটি জায়গা দরকার, যেখানে বাস, চালক ও শ্রমিকরা অবস্থান করবে এবং যাত্রী ওঠানামা করবে। বাস চালু হলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
নওগাঁ পৌরসভার প্রশাসক টি.এম.এ মমিন বলেন, পৌরসভার ভেতরে জায়গা স্বল্পতার কারণে নতুন করে বাসস্ট্যান্ড নির্মাণের মতো স্থান নেই। তবে শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড আধুনিকায়নের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যা খুব শিগগিরই বাস্তবায়ন হবে। তখন সেখানে অনেক বাস রাখা সম্ভব হবে।
মনিরুল ইসলাম শামীম/এআরবি