আয়েশার পর মারা গেল স্মৃতি
‘কাইলকা মা কয় বোলায় জাদু চোখ উল্টাইছে, আর জাদু কথা বলেনো’
‘আমার জাদু যেভাবে খুন হয়ছে, যেভাবে কষ্ট পায় মইরছে, আমার সন্তান যেভাবে চিৎকার দিয়ে মইরছে, আমি শুধু আমনেগো কাছে এর বিচার চাই। আমার জাদুর মৃত্যুর প্রতিশোধ চাই আমনেগো কাছে। আমার জাদু কত যন্ত্রণা পায় মৃত্যুবরণ কইরছে। কাইলকা মা, মা কয় জাদু চোখ উল্টাইছে, আর জাদু কথা বলেনো। ও আল্লাহ, আল্লাহ আমনেগো কাছে আঁই শুধু এটা চাই, আমনেরা শিগগিরই ওই খুনিরে ধরেন। ওই খুনিরে বাহির করেন, ওই খুনির বিচার চাই। আমনেগো কাছে ওই খুনির বিচার চাই।’
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে অগ্নিদগ্ধ মেয়ে সালমা আক্তার স্মৃতির (১৭) মৃত্যুর শোকে এভাবেই বিলাপ করেন মা নাজমা আক্তার। এদিকে ঘটনার (১৯ ডিসেম্বর) ৬ দিন শেষ হলেও বৃহস্পতিবার বিকেলে পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে পুলিশ বলছে- মামলাটি তদন্ত চলছে।
বিজ্ঞাপন
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে বাহির থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে পেট্রোল ঢেলে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও ব্যবসায়ী বেলাল হোসেনের টিনশেড বসতঘরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে তার ছোট মেয়ে আয়েশা আক্তার বিনতি (৮) ঘরের ভেতরেই পুড়ে মারা যায়। বেলালসহ তার অপর দুই মেয়ে স্মৃতি ও সায়মা আক্তার বিথি (১৪) দগ্ধ হয়। এর মধ্যে স্মৃতির শরীরের ৯০ শতাংশ ও বিথির শরীরের ২ শতাংশ দগ্ধ হয়। টানা ৫ দিন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থেকে স্মৃতি বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে মারা যায়। দুই মেয়ের শোকে কাতর বিএনপি নেতা বেলাল ও তার স্ত্রী নাজমাসহ স্বজনরা।
এদিকে মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে বিএনপি নেতা বেলাল বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে সদর মডেল থানায় মামলা করেন। ঘটনার পর থেকেই পুলিশ ঘটনাটি তদন্তে কাজ করছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিনটি তালা উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে দুটি তালা লক ও একটি খোলা অবস্থায় পাওয়া গেছে। তবে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগানোর আলামত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল হক।
বিজ্ঞাপন
বিএনপি নেতা বেলাল হোসেন বলেন, আয়েশাকে ঘটনার সময় খুঁজে পাইনি। সে পুড়ে মারা গেছে। তাকে কবরও দিতে পারিনি, আমি হাসপাতালে ছিলাম। আর বড় মেয়েটি দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় হাসপাতালে মারা গেছে। সেখানেও যেতে পারিনি।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াহিদ পারভেজ বলেন, মামলাটি তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।
জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক হাছিবুর রহমান বলেন, ঘটনার সময় বেলালের ছোট মেয়ে আয়েশা ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় বড় মেয়ে স্মৃতি মারা গেছে। ঘটনাটি মর্মান্তিক ও নির্মম। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। প্রশাসনকে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
হাসান মাহমুদ শাকিল/আরএআর