ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার গড়ভবানীপুর কাঠালডাঙ্গী এলাকায় জমি ও যাতায়াতের রাস্তা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধের সুষ্ঠু সমাধান হয়েছে জেলা লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে। আইনের আশ্রয় নিয়ে ন্যায়বিচার পেয়ে স্বস্তি ফিরেছে ভ্যানচালক মো. আব্দুল করিমের জীবনে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী মো. আব্দুল করিম ক্রয়কৃত ২৫ শতক জমিতে দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। বসতভিটার সঙ্গে যুক্ত যাতায়াতের রাস্তা নিয়েই প্রতিবেশী লুৎফর রহমান, মর্জিনা বেগম, মোবারক, মজিবর ও মোছা রুনাদের সঙ্গে তার বিরোধের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে তারা রাস্তা বন্ধ করার চেষ্টা এবং জমি দখলের পাঁয়তারা চালান। স্থানীয়ভাবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দিয়েও সমাধান না পেয়ে গত ২০ জুলাই আব্দুল করিম ঠাকুরগাঁও জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগ পাওয়ার পর লিগ্যাল এইড অফিস প্রতিপক্ষদের সমন জারি করে। পরে উভয়পক্ষের সম্মতিতে একই দিনে আপস-মীমাংসার লক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিনিয়র সহকারী জজ মজনু মিয়া মধ্যস্থতার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে সমাধানের পথ দেখান। এক পর্যায়ে বিবাদীরা তাদের দখলে থাকা জমি আব্দুল করিমকে বুঝিয়ে দিতে সম্মত হন।

শনিবার দুপুরে সরেজমিনে স্থানীয় ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় জমি মাপযোগ করে ভুক্তভোগীকে সম্পূর্ণ দখল বুঝিয়ে দেয় লিগ্যাল এইড অফিসার।

অন্যদিকে, ন্যায়বিচার পেয়ে আব্দুল করিম বলেন, আমি গরিব মানুষ। ভ্যান চালিয়ে যা আয় করি তাতেই সংসার চলে। কোর্ট-কাচারি, মামলা-মোকদ্দমা এসব আমার মতো মানুষের কাছে সবসময়ই ভয় আর দুশ্চিন্তার। আমি কখনো ভাবিনি একজন সাধারণ মানুষও আইনের কাছে দাঁড়িয়ে ন্যায়বিচার পেতে পারে। লিগ্যাল এইড আমাকে সাহস দিয়েছে, আমার অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। আজ শুধু জমিই ফিরে পাইনি, আইনের ওপরও আমার বিশ্বাস ফিরে পেয়েছি।

প্রতিবেশী মাজেদ, আরিফুল ও নুর মোহাম্মদ বলেন, জেলা লিগ্যাল এইডের মধ্যস্থতায় বিষয়টির সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ সমাধান হওয়ায় এলাকায় দীর্ঘদিনের উত্তেজনা দূর হয়েছে। একজন গরিব ভ্যানচালকও আইনের মাধ্যমে তার ন্যায্য অধিকার ফিরে পেয়েছেন, যা সাধারণ মানুষের জন্য এক দৃষ্টান্ত।

ঠাকুরগাঁও জেলা সুজনের সভাপতি মো. আব্দুল লতিফ বলেন, আব্দুল করিমের এই ঘটনা প্রমাণ করছে লিগ্যাল এইড সাধারণ মানুষের জন্য কতটা কার্যকর। ন্যায়বিচার কখনো বিত্ত ও প্রভাবশালীদের একচেটিয়া বিষয় নয়। আইনের সঠিক প্রয়োগে সাধারণ মানুষও তার অধিকার ফিরে পেতে পারে। আমরা চাই, এই ধরনের উদ্যোগ আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাক।

তিনি আরও বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে লিগ্যাল এইডের প্রচার এখনও সীমিত। সাধারণ মানুষ অনেক সময় জানে না, তারা বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পেতে পারেন। তাই প্রচারণা বাড়ানো প্রয়োজন, যাতে আরও বেশি মানুষ তাদের অধিকার বুঝতে পারে এবং প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নিতে পারে। বিশেষ করে লিগ্যাল এইডে কাজ করা আইনজীবীদের আরও উদার ও দায়িত্বশীল হতে হবে।

এ বিষয়ে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) মজনু মিয়া বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা প্রদান করা এবং তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা। আজকের ঘটনা তারই উদাহরণ। একজন গরিব ভ্যানচালকও আইনের মাধ্যমে তার জমি ফিরে পেতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করি  আপস-ীঁমাংসার মাধ্যমে বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হোক, আদালতের ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। সরেজমিনে উপস্থিত থেকে আইনগত প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালনা করা আমাদের দায়িত্ব। আশা করি এই ধরনের উদ্যোগ সাধারণ মানুষের মধ্যে আইনের প্রতি আস্থা বাড়াবে এবং তারা বুঝবে লিগ্যাল এইড সবসময় তাদের পাশে আছে।

রেদওয়ান মিলন/এমএএস