তীব্র শীতের মধ্যে মাঝ নদীতেই রাত পার করে অবশেষে ১৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে যমুনার মাঝ নদীতে আটকে থাকা বরযাত্রীবাহী নৌকা। 

শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে নৌকাটি উদ্ধার করে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার জামথল ঘাটে নেওয়া হয়। যাত্রীদের সকলেই সুস্থ ও স্বাভাবিক আছে বলে জানিয়েছেন মাদারগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের অয়্যার হাউজ ইন্সপেক্টর দেলোয়ার হোসেন।

ফায়ার সার্ভিস ও আটকা পড়া নৌকার যাত্রীরা বলেন, বরযাত্রী বহনকারী নৌকাটি রাতভর যমুনার মাঝ নদীতে অবস্থান করে। শনিবার ভোরে মাঝ ধরার একটি নৌকা দিয়ে তারা জামথল ঘাটের দিকে ফেরার চেষ্টা করে। জামথল ঘাট থেকে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের সহায়তায় আরও একটি নৌকা পাঠিয়ে দিয়ে তাদের নিরাপদে ঘাটে নেয়া হয়। পরে সকল যাত্রী নিরাপদে তাদের বাড়ি পৌঁছে।

বরযাত্রী আক্তার মিয়া বলেন, সারারাত খুব কষ্টে কেটেছে। একদিকে শীতের তীব্রতা অন্যদিকে নিরাপত্তার ভয়। ছোট বাচ্চা ও মেয়ে মানুষ নিয়ে অনেক কষ্টে রাত পার করেছি। মোবাইলের চার্জও শেষ হয়ে গিয়েছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো সহায়তা পাইনি। সকালে মাছ ধরার একটি নৌকা দিয়ে কিছু দূর এসেছি। পরে ঘাট থেকে আমাদের পারিবারের লোকজন নৌকা পাঠায়।

বরের বড় ভাই রাশেদুল ইসলাম বাবু বলেন, শীতের এই দীর্ঘ রাত জীবনের এক স্মরনীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। কুয়াশার মধ্যে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। শিশু বাচ্চা নিয়ে অনেক কষ্টে রাত পার করেছি। আমরা সবাই সুস্থভাবে ফিরতে পেরেছি।

মাদারগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের অয়্যার হাউজ ইন্সপেক্টর দেলোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শনিবার ভোর থেকেই উদ্ধারের চেষ্টা করি। ঘন কুয়াশার কারণে চোখে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। জায়গাটি বগুড়ার সারিয়াকান্দি এলাকার মধ্যে। পরে সকালে ঘাট থেকে নৌকা পাঠিয়ে দিয়ে তাদরে নিরাপদের উদ্ধার করা হয়েছে। যাত্রীদের সবাই সুস্থ আছে।

এর আগে, গতকাল শুক্রবার সকালে মাদারগঞ্জ উপজেলার তারতাপাড়া এলাকার সানোয়ার হোসেনের ছেলে নিলয় হাসান ছানির (২০) বিয়ে উপলক্ষ্যে ৪৭ জন বরযাত্রী বগুড়া শহরের সাবগ্রামের চারমাথা এলাকায় যায়। বিয়ের কাজ শেষে বর-কনেসহ সন্ধ্যা ৬টার দিকে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কলীতলা ঘাট থেকে মাদারগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বরযাত্রী বহনকারী নৌকাটি যমুনার মাঝ নদীতে পৌছলে ঘন কুয়াশার কারনে নৌকার মাঝি পথ হারিয়ে ফেলে। রাত ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত কুয়াশার মধ্যে পথ খোঁজে না পেয়ে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এ কল দিলেও ঘন কুয়াশার কারণে কোনো সাহায্য পায়নি। পরে কোন উপায় না পেয়ে যমুনার মাঝ নদীতেই নোঙ্গর করে রাতভর অবস্থান করে নৌকাটি। নৌকায় ১৭ জন মহিলা আছে, ৯ জন শিশু রয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জন শিশুর বয়স ১ থেকে দেড় বছরের মধ্যে।

মুত্তাছিম বিল্লাহ/আরকে