ঝিনাইদহ-৪ আসন
রাশেদ খাঁনের বিএনপিতে যোগদান ঘিরে উত্তাপ, স্বতন্ত্র বড় চ্যালেঞ্জ
রাশেদ খাঁনের বিএনপিতে যোগদান এবং ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন ঘিরে রাজনীতিতে নানা সমীকরণ শুরু হয়েছে। বিএনপি জোটের প্রার্থী ও গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁনের বিএনপিতে যোগদানকে ঘিরে ওই আসনের বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, তৈরি হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীর অভিযোগ, রাজনৈতিক আদর্শ নয়, বরং ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধিই রাশেদ খাঁনের মূল লক্ষ্য।
অন্যদিকে, গণঅধিকার পরিষদের জেলা নেতাকর্মীরা বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখছেন। তাদের দাবি, রাশেদ খাঁনের বিএনপিতে যোগদান একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত। ভোটের মাঠে সুবিধা আদায় করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ভোট শেষ হলে তিনি আবার নিজ দল গণঅধিকার পরিষদেই ফিরে আসবেন এমন প্রত্যাশা তাদের।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের দেওয়া ফুল গ্রহণ করে বিএনপিতে যোগ দেন রাশেদ খাঁন। সেসময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দিয়েছেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ঝিনাইদহ-৪ আসনে (কালীগঞ্জ ও ঝিনাইদহ সদরের চারটি ইউনিয়ন) ধানের শীষ প্রতীকে তিনি নির্বাচন করবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই যোগদান শুধু ব্যক্তি রাশেদ খাঁনের সিদ্ধান্তে নয়, বরং ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ ও ঝিনাইদহ সদরের চারটি ইউনিয়ন) আসনের নির্বাচনী সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এতে ভোটের রাজনীতিতে যেমন উত্তেজনা বাড়ছে, তেমনি দলীয় রাজনীতিতেও সৃষ্টি হচ্ছে প্রশ্ন ও অনিশ্চয়তা। সব মিলিয়ে, রাশেদ খাঁনের এই রাজনৈতিক ‘দলবদল’ ঝিনাইদহ-৪ আসনের নির্বাচনী সমীকরণকে আরও জটিল করে তুলছে। এই খেলায় শেষ হাসি কে হাসবেন সেটিই এখন দেখার অপেক্ষা।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, বুধবার দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা আনুষ্ঠানিকভাবে রাশেদ খাঁনকে ঝিনাইদহ-৪ আসনে (কালীগঞ্জ উপজেলা ও সদরের চার ইউনিয়ন) জোটের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন। তখন থেকেই দলীয় প্রার্থী বাদ দিয়ে অন্য দলের একজনকে প্রার্থী করায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী ও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
গত বুধবার থেকেই ওই আসনের রাশেদ খাঁনের প্রার্থিতা বাতিল করে স্থানীয় বিএনপির কোনো একজনকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য বিক্ষোভ, প্রতিবাদ সমাবেশ করতে থাকেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। এর জেরে শুক্রবারও ওই আসনের দুইজন মনোনয়নপ্রত্যাশী ও তাদের সমর্থকরা কাফনের কাপড় পরে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য একজোট হয়ে বিক্ষোভ ও গণ পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এমন অবস্থায় শনিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের দলীয় কার্যালয়ে দলের মহাসচিবের হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন রাশেদ খাঁন।
কালীগঞ্জ উপজেলার বিএনপির সাধারণ ভোটার শামীম আহমেদ বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিয়ে আসছেন। কিন্তু বিগত ১৭ বছর ধরে নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে যাননি। এবার আবারো ধানের শীষ প্রতীক দেখেই ভোট দেবেন। কিন্তু তার মনোনীত প্রার্থীকে বিএনপির পক্ষ থেকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তিনি হতাশ।
কবীর হোসেন বলেন, অনেক ইচ্ছা ছিল, কালীগঞ্জ বিএনপি থেকে একজন মনোনয়ন পাবেন তাকেই ভোট দেব। অথচ বিএনপি থেকে কাউকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তবে তিনি আশাবাদী অন্যান্য জায়গার মতো ঝিনাইদহ-৪ আসনে প্রার্থী পূর্ণ বিবেচনা করবেন, দলের হাই কমান্ড।
কালীগঞ্জ পৌরসভার বিএনপির সাধারণ ভোটার পারভেজ বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলায় বিএনপি থেকে তিনজন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তারা সবাই বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িঘর সব চেনেন। বিপদের দিনে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন। ভালো মন্দ, সব কিছুর খোঁজ খবর রাখেন তারা। কিন্তু তাদের মধ্যে কাউকে মনোনয়ন না দিয়ে, রাশেদ খাঁনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তাকে কালীগঞ্জের মানুষ কেউ চেনে না। তাহলে কিভাবে ভোট দেবে। সেতো ভোটে পাস করার জন্য বিএনপিতে যোগ দিয়েছে।
সদর উপজেলার মাইধারপুর গ্রামের ইব্রাহীম হোসেন বলেন, কালীগঞ্জের এই আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেখানে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সেখানে বিএনপি থেকে সাইফুল ইসলাম ফিরোজ যদি সতন্ত্র নির্বাচন করে তাহলে রাশেদের জন্য এই আসনে পাস করা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। কারণ দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ ভোটারদের কাছে কালীগঞ্জে ফিরোজ সবার থেকে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত।
গণঅধিকার পরিষদের ঝিনাইদহ জেলার সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তেই রাশেদ খাঁন বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। তিনি আবার যথা সময়ে অবশ্যই গণঅধিকারে ফিরবেন। নির্বাচনী কৌশল হওয়ার কারণে তিনি বিএনপিতে যোগ দিলেও আমরা তার পক্ষে নির্বাচনে কাজ করব।
তিনি আরও বলেন, একটি কুচক্রি মহল আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) জারি করে আজকের এ কৌশল করেছে। আরপিও’র ফাঁদে পড়ে রাশেদকে এই সিদ্ধান্ত নিতে রাষ্ট্র বাধ্য করেছে। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এখন বিএনপিতে যুক্ত হয়ে সংসদে তার বিপ্লবী চেতনা, শহীদদের বক্তব্য তুলে ধরবেন।
গণঅধিকার ছেড়ে বিএনপিতে যোগদানের বিষয়ে তিনি বলেন, রাশেদ খাঁন দেশের জন্য ওই জায়গায় গেছেন। রাশেদ খান এই মূহূর্তে বিএনপি আমরা গণঅধিকারে। আমরা সাবেক সাধারণ সম্পাদককে সহযোগিতা করছি না, আমরা সহযোগিতা করছি বিএনপির সাথে সমঝোতার দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ও কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ বলেন, গণঅধিকার থেকে নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারবেন না। এ জন্য আদর্শ বিবর্জিত হয়ে স্বার্থসিদ্ধির জন্য তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমার সঙ্গে আন্যায় করা হয়েছে। কালীগঞ্জের সাধারণ মানুষ এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কালীগঞ্জের সাধারণ মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী ২৮ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করব, যদি খুলনা বিভাগের নেতারা তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আমাদের মাঝখান থেকে কাউকে মনোনয়ন না দেয়, তাহলে আমি স্বতন্ত্র নির্বাচন করব। কারণ আমরা বিএনপিকে বাঁচাতে চাই। কালীগঞ্জের বিএনপিকে কারো কাছে বর্গা দিতে চাই না।
আব্দুল্লাহ আল মামুন/আরকে