দেশবাসী পরিবর্তন চায়, আমরা সেই পরিবর্তন আনব : গোলাম পরওয়ার
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, একেবারে সম্প্রতি দুটি দল আমাদের আট দলের জোটের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় অনেক আসনে বোঝাপড়া নিয়ে আলোচনা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ কারণে আমাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ আলোচনা হয়েছে। যেসব জায়গায় কিছুটা সিদ্ধান্তহীনতা রয়েছে, সেগুলো আমরা সব বিবেচনায় নিচ্ছি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় পর্যন্ত এই আলোচনা চলবে। দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া অব্যাহত থাকবে। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে আমরা প্রত্যাহার সম্পন্ন করলে, ১০ দলের কোন আসনে কতটি আসন থাকবে সে বিষয়ে তখনই চূড়ান্ত সংখ্যা বলা যাবে। কে কয়টি আসন পেল, তা আমাদের কাছে মুখ্য বিষয় নয়। আমরা যে কারণে আজ এক ছাতার নিচে এসেছি, তা হলো এই জাতির আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) খুলনা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আ. স. ম. জামশেদ খোন্দকারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। খুলনা-৫ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন।
বিজ্ঞাপন
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, গত ১৫ বছরে নির্যাতন, নিপীড়ন, দুর্নীতি, ভোটাধিকার হরণ, বিচারব্যবস্থা ও ন্যায়নীতির ওপর যে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে, সেই বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে আমরা নতুন করে গড়ে তুলতে চাই। ১৮ কোটি মানুষের গণআকাঙ্ক্ষা একটি মানবিক, ইনসাফপূর্ণ ও বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে তিনটি দল দেশ শাসন করেছে। তাদের শাসনব্যবস্থা, চরিত্র, ভিন্নমতের প্রতি আচরণ, সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রশ্নে তাদের ভূমিকা, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে তাদের অঙ্গীকার ও বাস্তব আচরণ সবই জাতির কাছে পরীক্ষিত। তাই জাতির আকাঙ্ক্ষা এখন স্পষ্ট, তারা পরিবর্তন চায়। জুলাই আন্দোলনে আমাদের সোনার সন্তানেরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উই ওয়ান্ট জাস্টিস স্লোগানে মুখরিত করেছিল। এখন জাতির আকাঙ্ক্ষা হলো উই নিড চেঞ্জ- আমরা পরিবর্তন চাই।
পরিবর্তন কারা আনবে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা একবার খেলেছে, তাদের দিয়ে আর খেলা হবে না। সেই খেলায় তারা ব্যর্থ হয়েছে। এখন পরিবর্তন আনবে আট দল। আমরা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো অভিন্ন কর্মসূচির ভিত্তিতে ইনসাফপূর্ণ, দুর্নীতিমুক্ত ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য আন্দোলন করছিলাম। গতকাল (রোববার) আরও দুটি দল এনসিপি ও এলডিপি আট দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ফলে এখন আমরা ১০ দল। ১০ দলের এই নতুন বাংলাদেশ গড়ার অভিযাত্রায় আশা করি ১৮ কোটি মানুষ আমাদের এই মিছিলে সহযাত্রী হবে। আমরাই এই পরিবর্তন আনতে পারব ইনশাআল্লাহ। আগামী নির্বাচনে দেশবাসীকে এই পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
বিজ্ঞাপন
গোলাম পরওয়ার বলেন, জনগণের এই জোয়ার দেখে প্রতিপক্ষের কিছুটা গাত্রদাহ শুরু হয়েছে, তাই তারা ষড়যন্ত্র করছে। তারা নানা ধরনের মিথ্যাচার ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচারে তারা লিপ্ত। জনগণ এখন এসব বুঝে গেছে এবং আর বিশ্বাস করবে না। আমরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাই। এই ঐক্য ভাঙতেও ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার হতে পারে।
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমরা সংগ্রাম করেছি, এবার আমাদের সংগ্রাম দুর্নীতির বিরুদ্ধে। আমরা সমাজকে দুর্নীতিমুক্ত করব। দুর্নীতিমুক্ত অর্থনীতি ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ এটাই এখন আমাদের মূল সংগ্রাম। আমরা আশা করি, জোট ঐক্যবদ্ধ থাকবে।
ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কোনো অপপ্রচার বা গুজবে কান না দিয়ে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষী এই ১০ দলের সঙ্গে থেকে আপনার মতামত প্রদান করুন।
গণভোট প্রসঙ্গে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জুলাই সনদের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়ে বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামো পরিবর্তন করে একটি নতুন রাষ্ট্রকাঠামো গঠনের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছি। এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে, যেখানে ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে না, দুর্নীতিবাজের জন্ম হবে না এবং ভিন্নমত দমনের মাধ্যমে জাতিসত্তা ধ্বংসের রাজনীতি তৈরি হবে না। এই বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল ও অংশীজন একমত হয়েছেন। সেই জুলাই সনদের পক্ষে একই দিনে হ্যাঁ ও না ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আমরা দেশবাসীকে আহ্বান জানাই, আপনারা ‘হ্যাঁ’-কে বিজয়ী করুন। সংস্কার মানে হলো দুর্নীতির বিপক্ষে কথা বলা, উন্নয়নের পক্ষে অবস্থান নেওয়া এবং অত্যাচার, নির্যাতন ও মূল্যবোধ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া। এই রাষ্ট্রে সংস্কার না হলে এবং বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যেই কেউ নির্বাচিত হয়ে এলে, সে আবার নতুন এক ফ্যাসিবাদে পরিণত হবে। তাই সবাই সংস্কারের পক্ষে হ্যাঁ বলুন, হ্যাঁ -কে জয়যুক্ত করুন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এই নির্বাচন জনগণের প্রত্যাশিত অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে কিনা এ নিয়ে আমরা এখনো শঙ্কিত। তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে এসেছে। কিন্তু প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের আশপাশে এখনো অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রয়েছে, হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন চলছে। আমাদের হিন্দু ভাইদের ওপরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে আপনারা কেন অন্য দলে ভোট দেবেন। বিষয়টি আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে সরাসরি জানিয়েছি এবং বলেছি, এটি দেখার দায়িত্ব আপনার। ভোটগ্রহণ নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ না হলে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কিনা, তা নিয়ে আমাদের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ও সরকারপ্রধানের কাছে আমরা আবেদন জানাই, আপনারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনুন। প্রধান উপদেষ্টা যেভাবে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ঈদের দিনের মতো উৎসবমুখর পরিবেশে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাবে -সেই পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব আপনার এবং নির্বাচন কমিশনের।
মোহাম্মদ মিলন/এআরবি