পিরোজপুরে ৩টি আসনে মূল লড়াই বিএনপি ও জামায়াতের
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর জেলার তিনটি সংসদীয় আসনে মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন পর্যন্ত বিভিন্ন দলের এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট ১৬ জন প্রার্থী বিভিন্ন সময়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে। এর মধ্যে সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন পিরোজপুর-১ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মাসুদ সাঈদী।
একইসঙ্গে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন পিরোজপুর-২ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী শামীম সাঈদী এবং আহমেদ সোহেল মঞ্জুর সুমন। এ ছাড়া, বিভিন্ন সময়ে অন্যান্য দলের প্রার্থীরা মনোনয়ন দাখিল করেছেন। এ সময় পিরোজপুরের বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা প্রার্থীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
এর আগে, পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী আব্দুল জলিল শরীফ মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন রুহুল আমিন দুলাল।
দেখা যায়, আসন্ন নির্বাচনে পিরোজপুরের তিনটি আসনেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী এক সময় জোটগতভাবে একসঙ্গে থাকা দল বিএনপি ও জামায়াত। পিরোজপুর-১ আসনে এবার বিএনপি প্রার্থী অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেনের বিপরীতে লড়ছেন জামায়াতের প্রয়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী। এ আসনের মোট ভোটারের এক-চতুর্থাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট থাকায় আসনটি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ছিল।
বিজ্ঞাপন
এই আসনে বিএনপি কেবল ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জয় পেয়েছিল। ১৯৯১ সালে মরহুম গাজী নুরুজ্জামান বাবুল আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। পরে ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি এ আসনটি জোটসঙ্গী জামায়াতের জন্য ছেড়ে দেয়। প্রয়াত জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ওই সময় দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
পিরোজপুর-২ আসনেও জামায়াতের প্রয়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আরেক ছেলে শামীম সাঈদী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বিএনপি প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম মঞ্জুরের ছেলে আহাম্মেদ সোহেল মঞ্জুর সুমনের সঙ্গে। এ আসনেও বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে মূল লড়াই হবে বলে স্থানীয়দের ধারণা।
এই আসনে ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৫টি নির্বাচনের ৩টিতেই বিএনপির প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন। জামানত হারানোদের মধ্যে ছিলেন প্রয়াত নুরুল ইসলাম মঞ্জুর, বিএইচ হারুন ও আবুল ওয়াহাব হাওলাদার। ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে বড় ব্যবধানে পরাজিত হন মঞ্জুর। ২০১৮ সালে এ আসনে বিএনপির শরিক লেবার পার্টির নেতা মোস্তাফিজুর রহমান প্রার্থী হলেও জয় পাননি।
এ ছাড়া, পিরোজপুর-৩ আসনে এলাকায় জনপ্রিয় ও শক্ত অবস্থানে থাকা বিএনপি প্রার্থী রুহুল আমিন দুলালের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী আব্দুল জলিল শরীফ।
এই আসনে ২০০১ সালে বিএনপি জয় পায়। তখন জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত রুস্তম আলী ফরাজী বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে জয়ী হন। এর আগে, ১৯৯১ সালে বিএনপি থেকে ইঞ্জিনিয়ার এম এ জব্বার প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন আহমেদ (পান্না মিয়া) বিজয়ী হন। ১৯৯৬ সালে জব্বার আবারও মনোনয়ন পেলেও জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজীর কাছে হেরে যান। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন রুহুল আমিন দুলাল। এবার এলাকায় জনপ্রিয় ও শক্ত অবস্থানে আছেন রুহুল আমিন দুলাল।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, পিরোজপুর জেলার তিন আসন থেকে মোট ২২ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। শেষ সময় পর্যন্ত এর মধ্যে ১৬ জন সংসদ সদস্য প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে পিরোজপুর ১ আসনে ৫ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী মাসুদ সাঈদী এই ২ জন।
পিরোজপুর-২ আসনে ৮ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী শামীম সাঈদী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আহমেদ সোহেল মঞ্জুর সুমন, সতন্ত্র প্রার্থী মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মাহমুদ হেসেন, এবিপি মনোনীত প্রার্থী ফয়সাল খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় পার্টি (জেপি) মনোনীত প্রার্থী মহিবুল হাসান নিয়ে ৭ জন। এ ছাড়া, পিরোজপুর-৩ আসনেও ৯ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেলেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৭ জন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনোনীত প্রার্থী রুহুল আমিন দুলাল, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী আব্দুল জলিল শরীফ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) শামীম হামিদি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী রুস্তম আলী ফরাজী, জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী মাসরেকুল আজম রবি, জাসদ মনোনীত প্রার্থী করিম শিকদার এবং সতন্ত্র প্রার্থী তৌহিদুর ইসলাম।
প্রার্থীরা জানান, আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে তারা আশাবাদী। ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে জনগণের রায়ই চূড়ান্তভাবে প্রতিফলিত হবে। এবং তারা সকলেই জয়ের ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন।
শাফিউল মিল্লাত/এএমকে