নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফজলুল আজিম দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও শেষ পর্যন্ত দলীয় টিকিট পাননি তিনি।

দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর মোহাম্মদ ফজলুল আজিম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। একইসঙ্গে তার স্ত্রী শামীমা আজিমও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে তাদের পক্ষে নেতাকর্মীরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।

স্বামী–স্ত্রীর একসঙ্গে নির্বাচনী মাঠে নামাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক।

জানা গেছে, নোয়াখালী–৬ (হাতিয়া) আসনে এবারের নির্বাচনে মোট ১৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে অ্যাডভোকেট শাহ মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে আবদুল হান্নান মাসউদ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে মো. মাহবুবুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন মোহাম্মদ ফজলুল আজিম, শামীমা আজিম, তানভীর উদ্দিন রাজিব, মুহাম্মদ নুরুল আমীন।

এ ছাড়া, জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে এ. টি. এম নবী উল্যাহ, নাছিম উদ্দিন মো. বায়েজীদ। অন্যান্য দলের মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) মোহাম্মদ আবদুল মোতালেব, গণঅধিকার পরিষদের মোহাম্মদ আজহার উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম শরীফ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মোহাম্মদ আবুল হোসেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) আমিরুল ইসলাম মোহাম্মদ আবদুল মালেক।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একই পরিবার থেকে একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীর অংশগ্রহণ ভোটের হিসাবকে জটিল করে তুলতে পারে। এতে ভোট বিভাজনের পাশাপাশি দলীয় শৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে এমন পদক্ষেপ দলীয় রাজনীতিতে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তবে ফজলুল আজিমের ঘনিষ্ঠদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় জনগণের ওপর আস্থা রেখেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

মো. রাশেদুল ইসলাম নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, নোয়াখালী–৬ (হাতিয়া) আসনে এবারের নির্বাচন বহুমাত্রিক ও আলোচিত হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশ কঠিন হবে।

এদিকে একাধিক নেতাকর্মী বলেন, হাতিয়ার রাজনীতিতে ফজলুল আজিমের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। হাতিয়ার উন্নয়নে তার ভূমিকা রয়েছে এবং স্থানীয়ভাবে তার সমর্থন এখনও শক্ত অবস্থানে আছে। তবে তিনি শারীরিকভাবে ফিট না, তা ছাড়া তার ঋণ খেলাপি রয়েছে। সম্ভবত তার প্রার্থীতা বাতিল হতে পারে সেজন্য তিনি স্ত্রীকেও প্রার্থী করেছেন।

এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ফজলুল আজিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) যোগদান করি। এরপর তিনবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার গৌরব অর্জন করেছি। এর মধ্যে দুইবার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এবং একবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে ধানের শীষের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও এবার আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তবুও আমি আশাবাদী, দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার মানুষ আমাকে শেষবারের মতো নির্বাচিত করে সংসদে পাঠাবেন। আমি সংসদে গিয়ে দ্বীপ হাতিয়ার মানুষের অধিকার, উন্নয়ন ও ন্যায্য দাবিগুলো দৃঢ়ভাবে তুলে ধরতে চাই। একইসঙ্গে এই আসনটি বিজয়ী করে দেশনায়ক তারেক রহমানের কাছে উপহার দিতে চাই।

আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী তার স্ত্রী শামীমা আজিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, যারা অতীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন এবং নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তারাই আজ ধানের শীষের প্রার্থী হয়ে মাঠে নেমেছেন এবং তাদের পক্ষে কাজ করছেন—এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমার স্বামী এই সংসদীয় এলাকার ধানের শীষের আন্দোলন ও রাজনীতির একজন প্রধান সংগঠক ও কান্ডারী ছিলেন। তাকে সহযোগিতা করতেই আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আমরা আশাবাদী, হাতিয়ার মানুষ বিভ্রান্তি ও ছদ্মবেশী রাজনীতির বেড়াজাল ভেঙে ঐক্যবদ্ধ হবেন এবং নিজেদের প্রকৃত, পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাকে চিনে নেবেন।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নোয়াখালীর ছয়টি আসনে ৮৮ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও জমা দিয়েছেন ৬২ জন প্রার্থী। ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বাছাই কার্যক্রম চলবে। তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একযোগে অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২০ জানুয়ারি। ২১ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে এবং ২২ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়ে চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে।

হাসিব আল আমিন/এএমকে