কুড়িগ্রামে জেঁকে বসেছে শীত। সপ্তাহ ধরে উত্তরের হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে জেলার শ্রমজীবি ও নিম্ন আয়ের মানুষ। গত চারদিন ধরে জেলায় সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। ফলে হিম ঠান্ডা বাতাস ও ঘন কুয়াশার কারণে ব্যাহত হচ্ছে কৃষি কাজ। ঘন কুয়াশায় নৌ-ঘাটগুলো থেকে সময় মতো ছাড়ছে না শ্যালে নৌকাগুলো। তীব্র ঠান্ডার কারণে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না মানুষ। 

বিভিন্ন জনসমাগম স্থানগুলো এখন ফাঁকা পরে আছে। বিশেষ করে ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামীকাল ৩১ ডিসেম্বরের পর আবহাওয়ার উন্নতি হবে বলে জানিয়েছেন জেলার রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার।

সরেজমিনে জেলার চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপূত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন দ্বীপচর নয়ারহাট ইউনিয়নের বজরা দিয়ারখাতায় গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা প্রচণ্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করে মাঠে বোরো ধানসহ পিঁয়াজ, আলু ও ভুট্টা রোপন করছেন।  

ওই গ্রামের মজিদুল ইসলাম (৬০) কাদের মিয়া (৫০) ও মীরবকস (৪৫) বলেন, কুয়াশা ও ঠান্ডার কারণে বের হওয়া যায় না। অনেক কষ্ট করে সকাল ১০টার মাঠে এসেছি। বিকেল ৪টা বাজলেই চারদিকে কুয়াশা জেঁকে বসে। ফলে কাজ করা যায় না। আমাদের কাজের খুব ক্ষতি হচ্ছে।

কৃষক মজিদুল ইসলাম বলেন, ঠান্ডা আর কুয়াশায় ভোরে উঠতে চাইলেও পারি না। সকালে খেয়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার দিকে জমিতে যাই। কিছুক্ষণ পর পর বাড়িতে এসে আগুণে হাত-পা গড়ম করে আবার মাঠে নামি।

একই গ্রামের নারী প্রধান পরিবারের মমেনা খাতুন (৬০) বলেন, আমার মেয়ের ৬ সন্তানসহ ৮ জনের পরিবারে কোনো পুরুষ মানুষ নেই। ঠান্ডার কারণে কাজে যেতে মন চায় না। তাও কষ্ট হলেও যাই। কাজ না করলে খামো কি। ঠান্ডায় নাতি-নাতনিগুলো কষ্ট করছে। কাপড় কেনার টাকা নেই। এই শীতে এখন কম্বলও পাই নাই বাবা।

গৃহবধূ জহিরন বেগম (৩০) বলেন, সারাদিন ঠান্ডা পানি নাড়াচাড়ার কারণে হাত-পা কুঁকড়ে যায়। চুলকানি হয়। দুদিন আগে আমার ও এক বছর বয়সী সন্তানের বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়েছে। এখানে কোনো ভালো ডাক্তার নাই। অসুস্থ শরীর নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। ব্রহ্মপূত্র নদ পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলা পরিষদ যেতে অনেক সময় লাগে, খরচও বেশি হয়। তাই টোটকা দিয়ে রোগ সাড়ানোর চেষ্টা চলছে।

একই অবস্থা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ১৬টি নদ-নদীতে অবস্থিত ৪২০টি চরের প্রায় ৫ লাখ মানুষের। অপ্রতুল যোগাযোগ ব্যবস্থা, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এসব চরের মানুষ মাটি কামড়ে পড়ে আছে বাপ-দাদার ভিটায় এক অদৃশ্য মায়ায়। শত কষ্ট হলেও তারা বাড়ি ছাড়ছেন না। ফলে এসব চরের নিম্ন আয়ের মানুষ এই হিমেল ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন।

এ ব্যাপারে চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুজ কুমার বসাক জানান, ১ হাজার ৩০০ কম্বল পেয়েছি। চরাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়নে ১ হাজার ২০০ কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেসব বিতরণের পর্যায়ে রয়েছে। আমরা খবর পেলেই নিম্নআয়ের পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল মতিন বলেন, ইতোমধে জেলার ৯টি উপজেলায় ৬ লাখ টাকা করে মোট ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উপজেলাগুলো থেকে শীতবস্ত্র কিনে বিতরণ শুরু করেছেন। এছাড়াও প্রাপ্ত ২৫ হাজার কম্বল জেলা থেকে বিতরণ করা হয়েছে। নতুনভাবে ৪০ লাখ ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যেগুলো আগামতে বরাদ্দ দেওয়ার কাজ চলমান রয়েছে।

মমিনুল ইসলাম বাবু/আরএআর