বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে টানা তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও ৩১ ডিসেম্বর সাধারণ ছুটি ঘোষণার মধ্যেই চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে ঘটে যায় একটি প্রশ্নবিদ্ধ ঘটনা। রাষ্ট্রীয় শোকের নির্দেশনা অমান্য করে অফিস খোলা রেখে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও কর্মীরা সেখানে ভূরিভোজের আয়োজন করেন। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ জানান, বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩১ ডিসেম্বর এবং ১ ও ২ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হবে। একই সঙ্গে ৩১ ডিসেম্বর সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। রাষ্ট্রীয় শোক চলাকালে সব সরকারি অফিসে কালো ব্যাজ ধারণ, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা এবং সব ধরনের আনন্দঘন অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

কিন্তু এসব নির্দেশনার তোয়াক্কা না করেই চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসে কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য সহকারীরা অফিস খোলা রেখে ভূরিভোজের আয়োজন করেন। ভিডিওতে দেখা যায়, অফিস প্রাঙ্গণেই ডেকচিতে রান্নাবান্নার প্রস্তুতি চলছে। অফিস খোলা রেখেই স্বাস্থ্যকর্মীরা দলে দলে সেখানে আসছেন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভ ও প্রশ্ন উঠেছে রাষ্ট্রীয় শোক দিবসে এমন আয়োজন কীভাবে সম্ভব?

জানা গেছে, অন্তত পাঁচ থেকে ছয় মাস আগে নিয়োগপ্রাপ্ত সাতজন স্বাস্থ্য সহকারীর যোগদান উপলক্ষে এই ভুড়িভোজের আয়োজন করা হয়। তবে ওই সাতজন স্বাস্থ্যকর্মীর নাম জানা যায়নি।

এদিকে জেলা সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহম্মেদ ঘটনাটিকে গুরুতর রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, অফিস খোলা হলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্তত চারজন স্বাস্থ্য সহকারী মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পাঁচ থেকে ছয় মাস আগে সাতজন স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে যোগদান করেছিলেন। সেই উপলক্ষেই আজ ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়েছে। এতে অফিসের অধিকাংশই অংশ নিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আওলিয়ার রহমান বলেন, খবর পেয়ে তিনি অফিসে যান। সেখানে উপস্থিত মাঠকর্মী ও স্বাস্থ্যকর্মীরা তাকে জানান, মাইক্রোপ্ল্যানসংক্রান্ত কিছু কাজ বাকি থাকায় সবাই অফিসে ছিলেন এবং একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেছেন। পাশাপাশি খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়েছে বলেও তারা তাকে জানিয়েছেন।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য সহকারীরা বলেন, অফিস প্রধানকে না জানিয়ে এমন কোনো আয়োজন করা সম্ভব নয়। তার অনুমতি ছাড়া অফিস খোলা রাখা বা ভোজের আয়োজন করার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি অবশ্যই বিষয়টি জানতেন।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহম্মেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাষ্ট্রীয় শোক দিবসে অফিস খোলা রাখা তো দূরের কথা, কোনো ধরনের অনুষ্ঠান করারই সুযোগ নেই। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও আমার নজরে এসেছে। এটি মোটেও উচিত হয়নি।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আওলিয়ার রহমানকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল। কারা কারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হবে। এ ঘটনায় ডা. আওলিয়ার রহমানকে লিখিত ব্যাখ্যা (শোকজ) তলব করা হবে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান সিভিল সার্জন।

আফজালুল হক/এআরবি