কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের শত শত নারী দেশি জাতের ছাগল (ব্ল্যাক বেঙ্গল) পালন করে দারিদ্র্য দূর করেছেন

সীমান্তঘেঁষা ও নদ-নদীময় জেলা কুড়িগ্রাম। এ জেলায় ছোট-বড় মিলে ১৬টি নদ-নদী রয়েছে। এসব নদীর অববাহিকায় সাড়ে চার শতাধিক চরাঞ্চলে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এসব চরের বেশির ভাগ বিধবা নারীসহ অনেকে কৃষিকাজের পাশাপাশি দেশি জাতের ছাগল (ব্ল্যাক বেঙ্গল) পালন করে দারিদ্র্য দূর করছেন। পরিবারে সচ্ছলতা আনছেন।

তেমনই এক নারী কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগল বাসা ইউনিয়নের সিতাই ঝাড় ভাটলারপাড়া গ্রামের মো. জাবেদ আলীর স্ত্রী জমিলা বেগম (৬০)। তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। ধরলা নদীভাঙনে ৬ থেকে ৭ বার বিলীন হয়েছে জমিলার বাড়ি। তবে ঘুরে দাঁড়ানোর একমাত্র অবলম্বন হিসেবে ছাগল পালনকে তিনি বেছে নিয়েছেন।

শুধু জমিলা বেগম নন, কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের শত শত নারী দেশি জাতের ছাগল (ব্ল্যাক বেঙ্গল) পালন করে দারিদ্র্য দূর করে পরিবারে এনেছেন সচ্ছলতা।

জমিলা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্বামী বৃদ্ধ। কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না। আমি আগে অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতাম। ৯-১০ বছর আগে এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে একটি ছাগল বর্গা নিয়ে শুরু করি ছাগল পালন। সেই ছাগল থেকে দুটি বাচ্চা হয়। একটি বাচ্চা আমি নিয়ে বাকি দুটি ছাগল প্রতিবেশীকে ফেরত দিই।

তিনি বলেন, একটি ছাগল দিয়েই শুরু হয় আমার পথচলা। আজ আমার ছোট খামারে ১০ থেকে ১৫টি ছাগল আছে। ছাগল উৎপাদন করে বিক্রি করি। সেই টাকা দিয়ে সংসার চলে আমার। দুই মেয়েকেই ছাগল বিক্রির টাকা দিয়ে বিয়ে দিয়েছি।

ছাগল পালনে আয় কেমন জানতে চাইলে জমিলা বলেন, বর্তমানে আমার ১০টি ছাগল আছে, যার আনুমানিক বর্তমান দাম হবে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। ছাগল পালনে আমার কোনো ব্যয় নাই। সকালে বাড়ি থেকে ছাগল নিয়ে আসি। সারা দিন চরে ঘাস খাওয়াই। এরপর বাড়ি যাই। কারণ, আমি সংসার চালিয়ে আসছি ছাগল পালন করে।

কোনো সহযোগিতা পেলে কি খামার বড় করবেন? জমিলা বলেন, সরকারিভাবে যদি আমাকে সহযোগিতা করা হয়, তাহলে আমি আরও বড় পরিসরে দেশি জাতের ছাগল পালন করব।

জমিলা বেগমের প্রতিবেশী মো. আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, জমিলা বেগম আগে মানুষের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু কয়েক বছর থেকে দেশি জাতের ছাগল পালন করে ভালোই লাভবান হচ্ছেন। সারাদিন ছাগলগুলোর পেছনে পড়ে থাকতে দেখি তাকে। ছাগল বিক্রির আয় দিয়ে ভালোই আছেন তিনি।

কুড়িগ্রাম সদর যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী সরকার বলেন, এই ইউনিয়নে অনেক চরাঞ্চল রয়েছে। চরে বসবাসকারী বিধবা নারীরা ছাগল-ভেড়া পালন করে দারিদ্র্য দূর করছেন। অনেক এনজিও অসচ্ছল নারীদের বিনামূল্যে ছাগল-ভেড়া দিচ্ছে। সরকার তাদের ছাগল পালনে সহযোগিতা করলে তারা আরও উন্নতি করতে পারবেন বলে মনে করি।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯টি উপজেলায় ছাগল-ভেড়া রয়েছে প্রায় ৭ লাখ ২৪ হাজার। তা ছাড়া চরাঞ্চলে খামারে সংখ্যা কম। তবে পারিবারিক ছাগলের খামার রয়েছে অনেক।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবদুল হাই সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, কুড়িগ্রামের দুর্গম চরাঞ্চলে ছাগল পালন দেখা যায়। আমরা সেখানে ফ্রি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম পাঠাই ছাগল ও ভেড়ার চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। তবে ছাগলের একটা রোগ আছে পিপিআর। এ রোগ হলে ছাগলের মৃত্যু হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখের মতো ভেকসিন দিয়েছি।

এনএ