এতিম তিন নাতি-নাতনিকে নিয়ে তাহেরার সংসার। ছেলে মারা যাওয়ার পর পুত্রবধূ তিন সন্তানকে রেখে চলে গেছে। তখন থেকেই তাদের নিয়ে লড়াই শুরু করেছেন দাদি তাহেরা বেগম। বয়সের ভারে চলতে পারছেন না তিনি। তবুও কুমিল্লা নগরীর পথে পথে ঘুরে মাস্ক বিক্রি করছেন। সেই টাকায় দুই নাতনি ও নাতির যাবতীয় খরচ বহন করছেন তাহেরা। 

তাহেরা বেগমের মাস্ক বিক্রি করে সংসার চালানোর বিষয়টি কুমিল্লা নগরবাসীর মনে দাগ কেটেছে। তাই অপ্রয়োজনেও অনেকে তার কাছ থেকে মাস্ক কিনছেন। কেউ আবার মাস্ক না কিনে টাকা দিতে চাইলে তিনি তা নিচ্ছেন না। তাই অনেকেই তাকে মাস্কের বক্স কিনে দিয়ে সহযোগিতা করছেন। কেউবা কয়েক দিনের বাজারও করে দিচ্ছেন। তাহেরা বেগমের এই লড়াই ফেসবুকে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

 

জানা গেছে, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নিখোঁজ হন তাহেরা বেগমের স্বামী মাসুম। আর ফিরে আসেননি। ছেলে মাহবুব এলাহীকে নিয়ে অভাব অনটনে চলছিল তাদের সংসার। ছেলেকেও বিয়ে দেন। তাদের ঘর আলো করে আসে দুই মেয়ে ও এক ছেলে। অভাব-অনাটনের সংসারে তারাও বড় হতে থাকে। 

এদিকে সংসারের হাল ধরার জন্য শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশ পাঠান। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বিদেশ যাওয়ার তিন মাসের মধ্যে মারা যায় ছেলেটা। স্বামীর মৃত্যুতে বউ তিন সন্তানকে ফেলে পালিয়ে যায়। 

দুই নাতনি ও এক নাতিকে নিয়ে তাহেরা বেগমের শুরু হয় বেঁচে থাকার লড়াই। তার নিজ গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়ায়। তবে অর্থসংকট ও নাতি-নাতনিদের পড়ালেখা করানোর জন্য কুমিল্লায় চলে আসেন। পথে পথে মাস্ক বিক্রি করে কোনোরকমে জীবন চালিয়ে নিচ্ছেন। তবে লকডাউনে বিক্রি কমে যাওয়ায় চিন্তিত তিনি।

মাস্ক কিনতে আসা নগরীর বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, উনি আমার মায়ের বয়সী। এই বয়সে নাতি-নাতনিকে নিয়ে আয়েশ করার কথা তার। অথচ তিনি ভিক্ষা না করে পথে পথে মাস্ক বিক্রি করছেন। উনি সরাসরি টাকা নিতে চান না। তাই প্রয়োজন ছাড়াও উনার কাছ থেকে মাস্ক কিনি। 

সৌদি প্রবাসী লেখক জাবেদ মাহমুদ জনি বলেন, ফেসবুকে ছবি দেখে এক ছোট ভাইকে দিয়ে এই মায়ের জন্য এক মাসের বাজার করে দিয়েছি। উনার পছন্দমতো বাজার ও মাস্কের বাক্স কিনে দিয়েছি। আমার সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে সহযোগিতা করেছি। সবাই এগিয়ে এলে এই মায়ের সংগ্রামী জীবনটা আরেকটু সহজ হতো।

তাহেরা বেগম বলেন, আমি ভিক্ষা চাই না। সবাই যদি আমার থেকে মাস্ক কেনে তাহলেই আমি খুশি। একটা সময় আমাদের অবস্থা ভালো ছিল। লোক-লজ্জায় ভয়ে কুমিল্লায় চলে এসেছি। আল্লাহ যতদিন বাঁচাইয়ে রাখবে ভিক্ষা করব না।

উল্লেখ্য, যদি কোনো সহৃদয়বান ব্যক্তি তাহেরা বেগমের পাশে দাঁড়াতে চান তাহলে এই নম্বরে (01830-692239) যোগাযোগ করার অনুরোধ রইল। এটি তাহেরা বেগমের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর।

এসপি