বসবাস শুরু করার আগেই বগুড়ার শেরপুরে আংশিক ভেঙে গেছে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুর্যোগ সহনীয় ঘর। টানা দুদিনের বৃষ্টিতেই ভূমিহীনদের দেওয়া বাড়ির একপাশের মাটি খালে ধসে গেছে। এতে করে বেশ কয়েকটি ঘর ভেঙে গেছে।

এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ময়নুল ইসলাম বলছেন, বাড়ি নয়, টয়লেটের এক পাশের মাটি ধসে গাইড ওয়াল ভেঙে গেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, তাড়াতাড়ি করে খালের কিনারায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি সেই খাল থেকেই মাটি কেটে বাড়ির চারপাশে মাটি দেওয়া হয়। তাই সামান্য বৃষ্টিতেই মাটি খালে ধসে যাওয়ায় ঘরগুলোর এই হাল হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের জায়গা নির্ধারণে সংশ্লিষ্টদের অদূরদর্শিতার কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

জানা যায়, শেরপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের খানপুর বুড়িগাড়ি খালের কিনারায় ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ভূমিহীন পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য ২২টি আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে সুফলভোগীদের হাতে এসব বাড়ির জমির দলিল ও চাবি হস্তান্তর করা হয়। টানা দুই দিনের বৃষ্টিতেই দুর্যোগ সহনীয় সাতটি ঘর ভেঙে পড়েছে।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প আশ্রয়ণ-২ এর আওতায় অতিদরিদ্র ভূমিহীনদের জন্য সরকারিভাবে আধা পাকা বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে মোতাবেক এই উপজেলায় ২ কোটি ৮৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে দুই শতক করে খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে উপজেলার আটটি ইউনিয়নে অতিদরিদ্র ১৬৩টি ভূমিহীন পরিবারকে একটি করে আধা পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়। দুই কক্ষ, রান্না ঘর ও টয়লেটসহ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের প্রত্যেকটি বাড়ি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

মঙ্গলবার (২৯ জুন) সকালে উপজেলার খানপুর বুড়িগাড়ি এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ির পেছন পাশের মাটি খালে ধসে পড়েছে। এতে করে সুবিধাভোগী হায়দার আলী, আব্দুল কাদের, বাদশা মিয়া, শেফালী বেগম, নদীয়ার চাঁদ, মোকছেদ আলী, সোনা উদ্দিন ও গোলাপী বেগমের ঘরগুলো ভেঙে পড়েছে।

খালটিতে বাঁশের পাইলিং করে প্রকল্পের বাড়িগুলো রক্ষার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু বার বার মাটি ধসে খালে পড়ায় ভেঙে পড়া ঘরগুলো পুনর্নির্মাণ কাজ করতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় সুবিধাভোগী অতি দরিদ্র ভূমিহীনদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

আবুল কালাম আজাদ, বাদশা মিয়াসহ একাধিক ভুক্তভোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যেকোনো সময় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো ভেঙে পড়তে পারে। কারণ খালটির কূল ঘেঁষে এসব ঘর বানানো হয়েছে। তাই সামান্য বৃষ্টিতেই এক পাশের মাটি ধসে ঘরগুলো ভেঙে যাচ্ছে। ভাঙন আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন বলে জানান তারা।

সুফলভোগীরা বলেন, আমাদের মতো ভূমিহীনদের একটি করে বাড়ি উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু নতুন বাড়িতে উঠতে পারছি না। বসবাস শুরুর আগেই বাড়ির একটি ঘর ছাড়া সবই ভেঙে পড়েছে। বাকি ঘরটির দেয়ালেও ফাঁটল ধরেছে। এটিও যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। তাই কি করব ভেবে পাচ্ছি না।

খানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম রাঞ্জু ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, খালের ধারে বাঁশের পাইলিং দেওয়া হচ্ছে। যাতে করে মাটি ধসে যেতে না পারে। তাছাড়া ভেঙে পড়া কয়েকটি টয়লেট ও রান্না ঘর পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে। তাছাড়া তেমন কোনো সমস্যা নেই। 

শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের দু’পাশের ঘরগুলো সব ঠিক আছে। কিন্তু মাঝখানে মাটি ধসে যাওয়ায় চার-পাঁচটি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি জানার পর পরই ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালককে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি খালের ধারে গাইড ওয়াল ও ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। 

সাখাওয়াত হোসেন জনি/এসপি