করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত মানুষের সার্বিক কার্যাবলী ও চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। বিধিনিষেধ সফল করতে লকডাউনের প্রথম দিন সকাল ৭টায় প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যেই রাস্তায় নামেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। 

এসময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, জেলা প্রশাসনের সকল এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এসিল্যান্ড, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, আনসার ও রোভার্স স্কাউটের সদস্যরা।

এদিকে সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া ৭ দিনের কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিন চলছে। সকাল থেকেই পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নাটোর শহরের বিভিন্নস্থানে অবস্থান নিয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সড়ক ও পৌর এলাকার অলিগলি। এছাড়া চেকপোস্টের মাধ্যমে রাস্তায় বের হওয়া মানুষসহ গাড়ি তল্লাশি করা হচ্ছে। 

সকালে নিচাবাজার এলাকায় পাইকারি-খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতাদের উপস্থিতি খুবই কম ছিল। ওষুধের দোকান, কাঁচাবাজার ছাড়া বন্ধ রয়েছে হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব ধরনের দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। জরুরি পণ্যবাহী যান ছাড়া বন্ধ রয়েছে অভ্যন্তরীণ সব ধরনের যান চলাচল। বন্ধ রয়েছে ট্রেন চলাচলও। 
 
শহরের ছায়াবানী মোড়, মাদরাসা মোড় ও বড়হরিশপুর বাইপাস মোড়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেখা গেছে। প্রশাসনসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে।

চেকপোস্ট বসানোর পাশাপাশি টহল দিয়ে মানুষকে ঘরে রাখতে পুলিশ কাজ করছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে প্রবেশ বা চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে। জরুরি সেবা ছাড়া ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে সকল যানবাহন। কঠোর লকডাউন ঘোষণার পর মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হয়। ফলে অন্যান্য লকডাউনের চেয়ে এবার মানুষ তুলনামূলক বেশি সচেতন রয়েছে।

নাটোর পৌরসভার বাসিন্দা আবির হোসেন বলেন, এর আগে অনেক লকডাউন দেখেছি। তবে এমন লকডাউন কখনো হয়নি। মাইকিং করার কারণে মানুষের মাঝেও ভয় কাজ করছে। তেমন জরুরি না হলে কেউ বাইরে বের হচ্ছে না। 

এক ফার্মেসি মালিক ঢাকা পোস্টকে জানান, ছায়াবানীর মোড়ে সব সময় যানজট লেগে থাকে। তবে আজ তেমন কোনো গাড়ি লক্ষ্য করছি না। সচেতনতা বা ভয় যাই হোক না কেন মানুষ ঘরে থাকছে। মাঝে মধ্যে দু-একটা ভ্যান রাস্তায় চলাফেরা করছে, তাও ভয়ে ভয়ে। শহরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১ থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত যে কঠোর বিধিনিষের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। নাটোর জেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং সকলে মিলে আমরা কঠোরভাবে কাজ করছি। সকাল ৬টা থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি।  

তিনি আরও বলেন, করোনা দীর্ঘ সময় থাকায় জনসাধারণ আগের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করতে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হলে পুলিশ তাদের ঘরে ফেরত পাঠাচ্ছে। আমরা আশা করছি মানুষ কঠোরভাবে মানলে সংক্রমের হার অনেকটা কমে আসবে। 

নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার, পাশাপাশি রোভার্স স্কাউট জনগণকে সচেতন করতে মাঠে নেমেছে। তারা কাজ করছে। যাদের মাস্ক নেই তাদেরকে জরিমানা করা হচ্ছে। পাশাপাশি রোভার স্কাউটের মাধ্যমে তাদেরকে সচেতন করাচ্ছি এবং মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ করা হচ্ছে। 

তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল বিভাগের সঙ্গে সুসমন্বয় রয়েছে। আমরা আশা করি সকলের একান্ত প্রচেষ্টা ও জনগণের সহযোগিতায় কঠোর বিধিনিষেধ সেটি নাটোর জেলায় দেশের মধ্যে ব্যতিক্রমভাবে পালিত হবে। 

জানা যায়, জেলা প্রশাসনের ১৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও ৭ উপজেলার ৭ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পাঁচজন সহকারী ভূমি কমিশনার লকডাউন সফল করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া নাটোর জেলায় তিন প্লাটুন সেনাবাহিনী ও দুই প্লাটুন বিজিবির পাশাপাশি র্যাব পুলিশ ও আনসার সদস্যরা লকডাউন সফল করতে মাঠে রয়েছেন। এদিকে জেলা রোভার স্কাউট সদস্যরাও এই দুর্যোগ সময়ে লকডাউন সফল করতে ভলেন্টিয়ারের ভূমিকা পালন করছেন। এছাড়া লকডাউন সফল করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।

অপরদিকে, নাটোর সদর হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় করোনাসহ উপসর্গে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৬৫০ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে ২২৫ জন আক্রান্ত হয়েছে। সংক্রমনের হার ৩৪.৬১ শতাংশ। জেলায় মোট আক্রান্ত ৪ হাজার ৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৭৫৪ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫৪ জনের। 

তাপস কুমার/এমএএস