বংশের শেষ বাতিটিও নিভে গেল ক্যানসারে
মরণব্যাধি ক্যানসারে মারা গেছে দুই ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রী। বংশ রক্ষার শেষ বাতি একমাত্র নাতি আল আমিনও (১০) শেষ পর্যন্ত চলে গেল ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে। টিকে আছেন শুধু আল-আমিনের বাবা মঙ্গল আলী (৪০)। বৃদ্ধ বয়সে মৃত্যুর মিছিল দেখে বাকরুদ্ধ আব্দুর রশিদ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কয়ারগাছি গ্রামের বৃদ্ধ আব্দুর রশিদ (৭৫)। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার ইকড়া গ্রামের আকবার আলীর মেয়ে সাহিদা বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তিন ছেলে এবং দুই মেয়ে হয়। বড় ছেলে রবিউল ইসলাম (৩০), মেজ ছেলে মঙ্গল আলী, ছোট ছেলে সফি উদ্দিন (২০) আর দুই মেয়ে খালেদা খাতুন (২৮) ও সেলিনা খাতুন (২৪)।
বিজ্ঞাপন
২০ বছর আগে স্ত্রী সাহিদা স্তন ক্যানসারে মারা যান। এরপর ছেলে আর পুত্রবধূদের নিয়ে চলছিল তার জীবন। স্ত্রীর মৃত্যুর ছয় বছর পর বড় ছেলে রবিউল ইসলামের (৩০) মাথায় টিউমার ধরা পড়ে। মাত্র এক মাসের মধ্যে তিনি মারা যান। এর ১৪ বছর পর স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে বড় মেয়ে খালেদা খাতুনের। তখন তার বয়স ২৮ বছর। এক বছর চিকিৎসাধীন থেকে খালেদাও মারা যান।
বড় মেয়ের মৃত্যুর এক বছর পর স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন ছোট মেয়ে সেলিনা খাতুন (২৪)। পাঁচ মাসের চিকিৎসা শেষে সেলিনাও মারা যান। চার বছর আগে ছোট ছেলে সফি উদ্দিন (২০) লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ক্যানসারে আক্রান্ত স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েদের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন বৃদ্ধ আব্দুর রশিদ। তার শুধু এক ছেলে বেঁচে আছেন, তারও হাঁটুতে টিউমার দেখা দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. খুরশিদ আলম ঢাকা পোস্টকে জানান, আব্দুর রশিদের নাতি আল-আমিনের (১০) মাথায় টিউমার ধরা পড়ে চার মাস আগে। ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে থেকে দীর্ঘ চার মাসের চিকিৎসা শেষে বৃহস্পতিবার তাদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাড়িতে ফেরত পাঠায়। সন্ধ্যায় তারা বাড়ি ফিরে আসেন। শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে আল-আমিনের মৃত্যু হয়। শুক্রবার দুপুরে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
বৃদ্ধ আব্দুর রশিদ জানান, ক্যানসারে স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ বংশের শেষ বাতিটিও নিভে গেল। একে একে স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে হারিয়েছি। বড় ছেলের মৃত্যুর পর তার স্ত্রীকে দ্বিতীয় ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলাম। সেই ঘরে আল-আমিনের জন্ম। নাতি খড়িখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। এখন সন্তানদের মধ্যে বেঁচে থাকল শুধু মেজ ছেলে মঙ্গল আলী। কিন্তু মঙ্গলেরও ডান পায়ের হাঁটুর ভেতরের দিকে একটা টিউমার হয়েছে। তারও কখন কী হয়, এই আতঙ্কে দিন কাটে।
তিনি আরও বলেন, স্ত্রী, ছেলে-মেয়েদের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছি। নিজের ভিটেবাড়িটুকুও নাই। সরকারি খাসজমিতে ঘর করে থাকি। এ বছর সরকার একটি ঘর করে দিয়েছে।
ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম বলেন, এই পরিবারটির বিষয়ে শুনেছি। একই পরিবারে ক্যানসারের ঘটনা বংশগতভাবে হতে পারে। মায়ের পর পর ছেলে-মেয়েদের হয়েছে। আগে থেকে এই রোগের চিকিৎসা নিলে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে একই পরিবারে এতগুলো মানুষের জীবনে এমন মর্মান্তিক ঘটনা আগে কখনো শোনা যায়নি।
আব্দুল্লাহ আল মামুন/এসপি