করোনা সংক্রমণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) চিহ্নিত অতি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলা কিশোরগঞ্জ। জেলায় করোনা পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। এখন পর্যন্ত জেলায় করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বা ডেল্টা ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হয়নি। সংকট নেই আইসিইউ শয্যা ও অক্সিজেনের।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জে গত বছর করোনা সংক্রমণ বাড়ায় শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে করোনা ‘ডেডিকেটেড’ হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ওই হাসপাতালে আরটি পিসিআর ল্যাবও চালু রয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারিভাবে জেলার বাজিতপুরের ভাগলপুরে জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও আরটি পিসিআর ল্যাব চালু রয়েছে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, কিশোরগঞ্জ জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন মজুত আছে। জেলার শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ও ভৈরব ট্রমা সেন্টারে নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহের জন্য কেন্দ্রীয় অক্সিজেনের ব্যবস্থা রয়েছে।

জেলায় ১৭টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সবগুলো আইসিইউ শয্যা ব্যবহৃত হয়নি। সবসময়ই কয়েকটি শয্যা খালি থাকে। এ ছাড়া বেসরকারিভাবে জেলার বাজিতপুরের ভাগলপুরে জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেলার করিমগঞ্জে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও আইসিইউ শয্যা রয়েছে।

কিশোরগঞ্জ জেলায় করোনা রোগীদের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২০টি শয্যা, কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ২০ শয্যা, ভৈরবে ট্রমা সেন্টার ২০ শয্য রয়েছে। 

এ ছাড়া ইটনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৫টি, কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাতটি, ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচটি, তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনটি, হোসেনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চারটি, পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০টি, কুরিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনটি, করিমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আটটি, বাজিতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চারটি, অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচটি, মিঠামইন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচটি ও নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চারটি শয্যা রয়েছে।

জেলায় করোনা রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে চিকিৎসা সরঞ্জাম রয়েছে বলেও জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ‘ডেডিকেটেড’ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া করোনা চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকগণ করোনা রোগীর পাশাপাশি আউটডোর ও ইনডোর দুই জায়গায় রোগী দেখেন বলে জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এ চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক, নার্স, টেকনেশিয়ান ও অ্যাম্বুলেন্স চালকসহ অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

জেলায় এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৩৬৮ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৫ হাজার ২৫৩ জন ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছেন। বাকিরা আইসোলেশন কিংবা হোম কোয়ারেন্টিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। জেলায় করোনায় শিশু, যুবকসহ বিভিন্ন বয়সের ৯১ জন নারী-পুরুষের মৃত্যু হয়েছে।

জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ও কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, এখন পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জেলার তিনটি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা রয়েছে। রোগীর সংখ্যা অনুয়ায়ী আইসিইউ শয্যা ও সাধারণ শয্যা এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত রয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলায় করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বা ডেল্টা ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হয়নি। তবে স্বপ্রণোদিত হয়ে কয়েকটি নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এখনো আসেনি।

এসকে রাসেল/এসপি