৫০ শয্যা বিশিষ্ট নলডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় প্রায় তিন লাখ মানুষের বাস। হাসপাতাল না থাকায় একদিকে যেমন ভোগান্তি, অন্যদিকে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে রোগীদের। স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলাবাসী। 

সম্প্রতি ৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল তৈরি হয়েছে এ উপজেলায়। গত মে মাসে এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের  নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এসেছে আধুনিক চিকিৎসাসরঞ্জাম। হাসপাতালটি আশার আলো ছড়িয়ে দিয়েছে এলাকায়। কিন্তু উদ্বোধনের জটিলতার কারণে চিকিৎসাকাজ শুরু হচ্ছে না। ফলে বেকার পড়ে থাকা হাসপাতালের সামনে দিয়েই রোগীদের যেতে হচ্ছে নাটোর কিংবা রাজশাহী। 

হাসপাতালের উদ্বোধন বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোরের জেলা প্রশাসক মো শামীম আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেকোনো দিন হাসপাতালটি উদ্বোধন হতে পারে। খুব শিগগিরই ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা পাবেন রোগীরা।  

জানা গেছে, হাসপাতালটি চালু হলে উপজেলার তিন লাখ মানুষ চিকিৎসাসেবা পাবেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের আর রাজশাহী-নাটোর সদর যেতে হবে না। নিজ উপজেলাতেই পাওয়া যাবে আধুনিক চিকিৎসার সব সুযোগ-সুবিধা।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নলডাঙ্গার মানুষের উন্নত চিকিৎসাসেবার কথা বিবেচনা করে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নাটোর সদর-নলডাঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের একান্ত প্রচেষ্টায় নলডাঙ্গায় ৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের অনুমোদন হয়। এরপর নলডাঙ্গা উপজেলা চত্বরের পাশে ৫০ শয্যার হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। এক একর জমির ওপর ২০১৮ সালের দিকে এ হাসপাতাল নির্মাণ শুরু হলে এলাকাবাসীর মনে আশার আলো ফুটে ওঠে। প্রায় ৪২ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে চার তলাবিশিষ্ট হাসপাতালের অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণ শেষ হয় চলতি বছরের মে মাসে। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুর হোসেন জানান, এই হাসপাতালটিতে লিফট সুবিধা রয়েছে। জরুরি রোগী আনা-নেওয়ার জন্য দু’টি অ্যাম্বুলেন্স থাকবে। এতে মেডিসিন বিভাগ, সার্জারি বিভাগ, অর্থোপেডিক্স বিভাগ, নাক-কান-গলা ও একটি শিশু বিভাগ, স্কিন বিভাগ, গাইনি বিভাগ, পোস্ট অপারেটিভ বিভাগ, একটি ডায়রিয়া ও একটি কার্ডিওলজি বিভাগ থাকবে। 

হাসপাতালে নিজস্ব জেনারেটর ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। হাসপাতালে গাইনি, জেনারেল সার্জারি, অর্থোপেডিক্স, চক্ষু ও নাক-কান-গলার অপারেশনের ব্যবস্থা রয়েছে।

সমাজসেবক অধ্যাপক ডক্টর জিয়াউল হক জিয়া বলেন আধুনিক হাসপাতাল ও চিকিৎসাব্যবস্থা প্রস্তুত থাকার পরেও আমাদের নলডাঙ্গার মানুষকে নাটোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যেতে হচ্ছে। এই দুর্যোগের সময় বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। 

সোনাপাতিল গ্রামের মজিবর রহমান বলেন, নলডাঙ্গায় পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল থাকার পরেও নাটোর কিংবা রাজশাহীতে চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে। 

নলডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল চালু হলে খুব সহজেই দূর-দূরান্তের রোগীরাও চিকিৎসাসেবা নিতে পারবে। এটি নলডাঙ্গা মানুষের ভরসাস্থলে পরিণত হবে।

নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। অচিরেই হাসপাতাল চালু হবে।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, করোনা মহামারির সময় নলডাঙ্গা হাসপাতালের কাজ শেষ হবার পরেও উদ্বোধনের অজুহাতে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে নলডাঙ্গাবাসীকে। এটা মোটেই কাম্য নয়।

নাটোর সিভিল সার্জন ডা. কাজী মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই স্বাস্থ্য বিভাগকে ভবন বুঝিয়ে দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হবে। প্রশাসনিক অনুমোদন হলেই জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। এরপরেই উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে নাটোরে নলডাঙ্গা উপজেলার ৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের কার্যক্রম। 

তাপস কুমার/এইচকে