বাগেরহাট সদর হাসপাতালের গেটের সামনে দেখা গেল নানা বয়সী রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর চাপ আরও বাড়তে থাকে। এদিকে করোনা নমুনা সংগ্রহের জন্য হাসপাতালের নির্ধারিত স্থানেও মানুষের জটলা। ভেতরে প্রবেশের কোনো অবস্থাই নেই। যারা ভেতরে আছেন, তারাও দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে অস্থির হয়ে উঠেছেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখা যায়, করোনা রোগীসহ নানা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, নানা সংকট, সীমাবদ্ধতা ও করোনা সংক্রমণের ভয় উপেক্ষা করে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন রোগীদের সেবা দেওয়ার। তবু কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। হাসপাতালে কথা হয় সবুজ ও নেওয়াজ নামের দুই জন করোনা রোগীর স্বজনের সঙ্গে। তারা জানান, কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে আসছেন। শ্বাসকষ্টের রোগীদের একমাত্র ভরসা সেন্ট্রাল অক্সিজেন ইউনিট। রাতে কোনো প্রয়োজন হলে জানানোর অনেকক্ষণ পর নার্স আসেন। রোগীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হলে হাসপাতালে আইসিইউ না থাকায় খুলনায় নিয়ে যেতে হয়, তখন পড়তে হয় ব্যাপক ভোগান্তিতে।

করোনার নমুনা দিতে আসা শহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা আশানুরূপ নয়। করোনার পরীক্ষার নমুনা দিতে এসে উল্টো সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে আছি।

করোনা সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য স্থাপিত বাগেরহাট সদর হাসপাতাল সংলগ্ন ৫০ শয্যার কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১০ জন চিকিৎসক ও ১২ জন নার্স রয়েছে। রোগীর সংখ্যা বাড়ায় হিমশিম খাচ্ছেন তারা। জুন মাসে ৭৩ জন করোনা রোগী এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রতিদিন ৪০ জনের বেশি ছিল রোগীর সংখ্যা। জুলাই মাসে এই রোগীর সংখ্যা আরও বেড়েছে। গত রোববার দুপুরে ৫০ শয্যার এই কোভিড হাসপাতালে রোগী ছিল ৫৬ জন, সোমবার ছিল ৫১ জন। সংকট পূরণে খুলনা থেকে ছয় জন নার্স এবং বিভিন্ন উপজেলা থেকে অতিরিক্ত চার জন চিকিৎসক আনা হয়েছে কোভিড হাসপাতালের জন্য। এরপরও সব রোগীকে সুচিকিৎসা দিতে পারছেন না তারা।

অন্যদিকে কোভিড হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট থাকলেও নেই আইসিইউ সুবিধা। আইসিইউ সেবা দিতে না পারায় সংকটাপন্ন অবস্থায় রোগী স্থানান্তর করতে হচ্ছে খুলনাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে। যদিও করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে চাপ সামলাতে চলতি বছরের প্রথম দিকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে দশ শয্যার আইসিইউ ইউনিটের জন্য সরঞ্জাম বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রায় ছয় মাস ধরে সেসব যন্ত্রপাতি অকেজো অবস্থায় পড়েই রয়েছে। এছাড়া আইসিউ সুবিধা নিশ্চিত করতে স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ তন্ময় তিনটি আইসিউ শয্যা দিলেও প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবে চালু করা যায়নি আইসিউ সেবা।

কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর স্বজন মাসুদ হাসান বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসকরা খুবই আন্তরিক। তবে নানা সংকটে রোগীরা পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এছাড়া হাসপাতালের কক্ষগুলোর দরজা বন্ধ করার সময় বিকট শব্দ হয়, যা রোগীদের জন্য খুবই বিরক্তিকর।

নাহিদ আকুঞ্জি ও আমিনুল ইসলামের নামের দুই জনকে সকাল থেকেই হাসপাতালের এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, প্রায় ২০ দিন আগে ভ্রাম্যমাণ নমুনা সংগ্রহকারী দলের কাছে পরিবারের সবার নমুনা দিয়েছিলাম। এখনও কোনো রিপোর্ট পেলাম না। ফোন করলে বলে- আমাদের শুধু নমুনা সংগ্রহের কাজ, আপনারা হাসপাতালে খোঁজ নেন। হাসপাতালে গেলে বলে যাদের কাছে নমুনা দিয়েছেন, তাদের কাছে খোঁজ নেন। কতদিন ঘুরতে হবে আল্লাহ জানে। কোনো নিয়ম-ই নেই।

বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কেএম হুমায়ুন কবির বলেন, কিছুদিন ধরে করোনা রোগী খুব বেড়েছে। সেই সঙ্গে রোগীদের লক্ষণও বেড়েছে। যার কারণে হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে বেশি। রোগী বাড়ায় আমরা ৫০ শয্যাকে ৭০ শয্যায় রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছি। এজন্য ২০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার আনা হয়েছে। আইসিইউ চালুর জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্সকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করেছি।

তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পাশাপাশি করোনার সংক্রমণ রোধে আমরা সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে পরিস্থিতি যদি বেশি খারাপ হয়, তাহলে আমাদের পক্ষে সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে।

তানজীম আহমেদ/এসএসএইচ