তিস্তার তীব্র ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে চর দক্ষিণ গাবুরা গ্রাম

ভারত থেকে ধেয়ে আসা উজানের ঢলে একাকার তিস্তা নদী। হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে দেখা দিয়েছে আকস্মিক বন্যা। রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় তিস্তার তীব্র ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে চর দক্ষিণ গাবুরা গ্রামটি।

সেখানকার একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চর দক্ষিণ গাবুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও রয়েছে হুমকিতে। ভাঙনে নদীগর্ভ থেকে স্কুলটি এখন মাত্র ১৫ মিটার দূরে। ভাঙতে ভাঙতে বিলীন হয়েছে এ গ্রামের বেশিরভাগ বসত-বাড়ি।

ভাঙন ঠোকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে জিও ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে। তবে অসময়ের পদক্ষেপে শেষ পর্যন্ত বিদ্যালয়টি টিকবে কি না, এ নিয়ে শঙ্কায় আছেন স্থানীয়রা। চোখের সামনেই ঘনবসতিপূর্ণ কোলাহলমুখর গ্রামটি বিলীন হচ্ছে। আর মাত্র ৪টি পরিবারের বসতভিটা তিস্তা নদীগর্ভে বিলীন হলে মাত্রচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে দক্ষিণ চর গাবুরা।

শনিবার (১০ জুলাই) দুপুরে সরেজিমন দেখা যায়, তিস্তার গ্রাস থেকে বিদ্যালয়টি রক্ষায় শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাদের সঙ্গে কোমর বেঁধে কাজে যোগ দিয়েছে বিদ্যালয়টি স্থানীয় শিক্ষক, অভিভাবক ও শিশুশিক্ষার্থীরাও।

স্থানীয়রা জানান, কয়েক দিনে নদীগর্ভে গ্রামের ৫০টি বসতবাড়ি বিলীন হয়েছ। ভাঙনের কবলে পড়া পরিবারগুলো এখন আশ্রয়হীন। সেখানে আরও বেশি পরিমাণ জিও ব্যাগ ফেলানো দরকার। সঙ্গে ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজে বের করা উচিত। নয়তো প্রতিবছর তিস্তার ভাঙনে ছোট হয়ে আসবে নদীতীরবর্তী জনপদ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের চর দক্ষিণ গাবুরা গ্রামে একসময় বাড়িঘর ছিল ঘনবসতি। গ্রামের শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে ১৯৯০ সালে গড়ে তোলা হয় চর দক্ষিণ গাবুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

নদীর ভাঙন ২০১৪ সালে সেই বিদ্যালয়টিকে হাতছানি দিয়েছিল। সেইবার ভাঙন হুমকি রোধে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে পিইডিপি-৩ প্রকল্পের অর্থায়নে আধুনিক মানের সুরক্ষিত বিদ্যালয় ভবন গড়ে তোলা হয়। কিন্তু ৭ বছর পার না হতেই বিদ্যালয়ের কাছাকাছি চলে তিস্তা।

স্থানীয়রা বলছেন, চলতি বছরেই ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে গ্রামের ৫০ বাড়ি। আর মাত্র ৪টি বসতবাড়ি ও একমাত্র স্কুলটি ভেঙে গেলেই মুছে যাবে গ্রামটি। এদিকে নদীগর্ভের কিনারায় থাকা বিদ্যালয়টি রক্ষায় নড়েচড়ে বসেছে সংশ্লিষ্টরা।

৪ বসতবাড়ি ও একমাত্র স্কুলটি ভেঙে গেলেই মুছে যাবে গ্রামটি

দিনে-রাতে ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ। চলছে শেষ রক্ষার তোড়জোড়। তবুও কাজ হচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে, গত বছর বন্যার সময়েও সরকারি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছিল। তখন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তিস্তার পেটে ঘরবাড়ি হারানো খয়বার আলী, তালেব মিয়া ও আমজাদ হোসেন জানান, সময়মতো উদ্যোগ নিলে বিদ্যালয়ের আশেপাশের বাড়িঘরও রক্ষা পেত। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বরত ব্যক্তিদের উদাসীনতার কারণে তারা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। ৫ বছরে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি, প্রায় ৫ হাজার পরিবারের বসতভিটা এই নদীতে বিলীন হয়।

ভাঙনের শিকার সাইফুল ইসলাম বলেন, অপরিকল্পিতভাবে দুইটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। বন্যা হলে বাঁধের পূর্বের গ্রামগুলো রক্ষা পাচ্ছে না। ফলে প্রতি বছর নদী ভাঙনের কবলে ছাওলা ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে ছোট হয়ে আসছে। এই ভাঙন রোধে ছাওলার বোল্ডারের মাথা থেকে আরও ৩ কিলোমিটার বোল্ডার দিয়ে শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণ করা জরুরি।

চর দক্ষিণ গাবুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন বলেন, নদী একেবারে বিদ্যালয়ের কিনারে চলে এসেছে। আমরা ভাঙনরোধে চেষ্টা করছি। এখন আরও ৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা দরকার। তাহলে হয়তো বিদ্যালয়টি রক্ষা করা যেতে পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জ্যেতি প্রকাশ ঘোষ বলেন, ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগের মাধ্যামে মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। স্থানীয়ভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বিষয়গুলো আন্তরিকভাবে দেখছেন। ভাঙন রোধে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএসআর