রাতে থাকার শেড থেকে সম্রাটকে যখন দিনের আলোতে বাইরে নিয়ে আসা হয় তখন মোটা দড়ি দিয়ে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে ৭ থেকে ৮ জন লোককে হিমশিম খেতে হয়। যদি আগে থেকে কোনো গাছের সঙ্গে সম্রাটকে বাঁধার দড়িটা পেঁচিয়ে ফেলা না হয় তখন ঘটে বিপত্তি।

নিয়ন্ত্রণে থাকা আটজন মানুষের করার কিছু থাকে না। সম্রাট যেদিক যায় সেদিকেই তাদের যেতে হয়। এই ৩৩ মণ ওজনের সম্রাটই ফরিদপুরের এবারের সবচেয়ে বড় গরু। যেটিকে তোলা হবে এবারের কোরবানির হাটে।

সম্রাটকে দেখতে হলে যেতে হবে ফরিদপুর শহর থেকে আনুমানিক পাঁচ কিলোমিটার দূরে শহরতলীর বিল মাহমুদপুরে। ওই গ্রামে মাইশা ডেইরি ফার্ম নামে একটি গরুর খামার আছে। এ খামারেই সম্রাটের বসবাস। সম্রাট দৈর্ঘ্যে সাড়ে নয় ফুট, প্রস্থে ৮ ফুট ও উচ্চতা ৫ ফুট আট ইঞ্চি।

২০১৫ সালে এ ফার্মটি স্থাপিত হয়। এটি স্থাপন করেন রফিকুল ইসলাম সবুজ (৩৪) নামে এক ব্যক্তি। সবুজ কারিগরি বোর্ড থেকে ইলেকট্রনিক্সও ইলেকট্রিক্যাল বিভাগ থেকে পাস করেন। চাকরি করতেন একটি বেসরকারি ফার্মে।

চাকরিরত অবস্থায় প্রবাসী বড় ভাই মামুনুর রহমানের অনুপ্রেরণায় ফার্মিটি দেন তিনি। চারটি গরু নিয়ে যাত্রা করে ফার্মটি। প্রথমে দেখাশোনা করতেন ছোট ভাই সাইদুর রহমান। ২০১৭ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি খামারি হয়ে ওঠেন রফিকুল।

ফ্রিজিয়ান জাতের এই গরুটির বয়স ৩২ মাস। সম্রাটের জন্ম এই ফার্মেই। জন্মের সময় সম্রাটের ওজন ছিল প্রায় ৬০ কেজি। সম্রাটকে দেখাশোনা করতেন সালাম শেখ (২২) নামে এক তরুণ। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জ।

সালাম শেখ রফিকুলকে বলেছিল, ‘ওর নাম রাখা হোক সম্রাট। কেননা ওর আচার-আচরণ সম্রাটের মতোই। কাউকেই পরোয়া করে না। এটি বড় না হওয়া পর্যন্ত বিক্রি করবেন না।’ সালামের কথা রেখেছেন রফিকুল। তাই সম্রাটের জন্মের ৩২ মাস পর চলতি কোরবানির হাটে তাকে বিক্রির জন্য উদ্যোগ নিয়েছে রফিকুল।

রফিকুলের মা শিরিন বেগম (৫১) জানান, ‘গরুটার প্রতি মায়া জমে গেছে। ওকে বিক্রি করে দেওয়া হবে এ সিদ্ধান্ত জানার পর থেকে মনে শান্তি নাই। ওরে যেদিন নিয়া যাবে, জানি না তারপর কী নিয়া থাকব।’

সম্রাটছাড়া আরও দুটি গরু বিক্রি করা হবে এ ফার্ম থেকে। তাদের নাম নেই। একটি ওজন ৮ মণ, অপরটির ৯ মণ। রফিকুলের প্রত্যাশা সম্রাটকে ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব হবে।

জেলা পশুসম্পদ কর্মকর্তা নূরুল্লা মো. আহসান বলেন, সম্রাটকে কেনার ক্রেতা ফরিদপুর অঞ্চলে পাওয়া কঠিন হবে। সম্রাটকে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়ায় ভালো হবে। গরুটি ঢাকা, চট্টগ্রামে বিক্রি হওয়ার যোগ্য। ওখানে নিতে পারলেই সম্রাটের সঠিক মূল্যায়ন পাওয়া যাবে।

এমএসআর