খুলনায় নতুন ছয়টি আমন ধানের জাত উদ্ভাবনে সফল হয়েছেন কৃষক আরুণি সরকার। লোকজের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের ধারাবাহিকতায় বটিয়াঘাটার গঙ্গারামপুর গ্রামের এ কৃষক দেশীয় প্রজাতির ১০টি জাতকে মাদার ও ১০টি জাতকে ফাদার করে ইমাসকুলেশন ও পলিনেশনের মাধ্যমে ব্রিডিং এর মাধ্যমে নতুন ছয়টি জাত উদ্ভাবনে সফল হন।

উদ্ভাবিত নতুন ধানের ছয়টি নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত নামগুলো হলো আলো ধান, লোকজ ধান, আরুণি ধান, গঙ্গা ধান, মৈত্রী ধান ও লক্ষ্মীভোগ ধান। রোববার (১৮ জুলাই) ইউনিয়নের স্টার ইউনিট প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রস্তাবিত ধানগুলোর নাম  তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১০ সালে ব্রিডিং প্রশিক্ষণ নিয়ে ইমাসকুলেশন ও পলিনেশনের মাধ্যমে ব্রিডিং করে নতুন জাত উদ্ভাবনে সফল হয়ে ২০২০ সালের আমন মৌসুমে শেষ হয়। উদ্ভাবিত এই নতুন জাতগুলোর মধ্যে বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

যার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য মাদার-ফাদার থেকে ফলন বেশি, গাঁথুনি ঘন, শীষ লম্বা, দুর্যোগ সহিষ্ণু ও মাদার-ফাদার থেকে জীবনকাল কম। নতুন এই ছয়টি জাত এলাকা উপযোগী ও ইতিবাচক হওয়ায় ইতোমধ্যে এলাকার কৃষকরা এই সব ব্রিডিং ধানের বীজ সংগ্রহ করছেন।

নতুন জাতের উদ্ভাবক কৃষক আরুণি সরকার জানান, আমি ২০১০ সালে পিরোজপুরের বুলিশাখালী গ্রামে ছয় দিনের একটা ট্রেনিং নেই। সেখানে ফিলিপাইনের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর ট্রেনিয়ে আমাদের ধানের কাটিং, পরাগায়ন, জাত নির্বাচন করতে শেখান।

কৃষক আরুণি সরকার

তিনি আরও বলেন, তারপর থেকে আমি দেশীয় ৩৬ রকমের জাত থেকে ২০টি জাত নির্বাচন করি এবং নতুন জাত উদ্ভাবনের কাজ শুরু করি। এ বছর ১০ কাঠা জমিতে ১১ মণ ধান পেয়েছি, সেখান থেকে সংগঠনে এবং কৃষকদের বীজ দিয়েছি। নতুন জাতের ধান মোটা, লম্বা ও শক্ত; এ জন্য পোকা কম, বাঁচেও বেশি। চাল খেতেও সুস্বাদু।

কৃষক দেব জ্যোতি মহলদার বলেন, আরুণি ধান ৪ বছর ধরে চাষ করছি। প্রথম দুই বছর ফলন খারাপ হয়েছিল। তবে শেষ দুই বছর ফলন বেশ ভালো। অন্য ধান বিঘা প্রতি ১২-১৫ মণ পেতাম, এই ধান পাই ২০ মণ।

লোকজের সভাপতি গৌরাঙ্গ নন্দী বলেন, এখন আমাদের কাজ হবে এই ধানের চাষ আরও বৃদ্ধি করা। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সয়েল ক্যারেকটার প্রায় একই রকম, সুতরাং এই অঞ্চলে নতুন জাতের ধানের ফলন ভালো হবে। আশা করছি এই নতুন জাতের ধান বিকশিত হবে, প্রতিষ্ঠা পাবে দেশে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লোকজ এবং মৈত্রী কৃষক ফেডারেশনের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন লোকজের সভাপতি সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী এবং লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মন্ডল।

বক্তব্য রাখেন গঙ্গারামপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ মো. হাদি-উজ-জামান হাদী, কৃষক ফেডারেশনের সহসভাপতি আশালতা ঢালী, সহসাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান লাভলু ও কৃষক আরুণি সরকার, কৃষক দেবজ্যোতি মহালদার, তরুণি সরকার প্রমুখ।

মোহাম্মদ মিলন/এমএসআর