অনুকূলচন্দ্রের স্মৃতি বিজড়িত স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের দাবি
পাবনার হেমায়েতপুর মানসিক হাসপাতাল ক্যাম্পাসে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের স্মৃতি বিজড়িত বিশ্ববিজ্ঞান কেন্দ্রের স্থাপনা প্রকাশ্যে ভেঙে ফেলার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। অথচ এতবড় নিরাপত্তা বলয় থেকে কে বা কারা রড, দরজা-জানালা খুলে নিচ্ছে কিছুই জানেন না মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত স্থাপনাগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই হেমায়েতপুর সৎসঙ্গ আশ্রম কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট দফতরে দাবি জানালেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে পাবনার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিম বলেন, পাবনা মানসিক হাসপাতালের অভ্যন্তরে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের স্মৃতি বিজড়িত স্থাপনা ভেঙে ফেলার কোনো নির্দেশনা আমাদের কাছে নেই। আর সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আমাদের ভেঙে ফেলার ক্ষমতাও নেই। আমি যতটুকু জানি, এটি সংরক্ষণের জন্য একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ১৮৮৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পাবনার হেমায়েতপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২৯ সালে তিনি হেমায়েতপুরে অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেন। সৎসঙ্গের মূল উদ্দেশ্য মানুষকে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।
তিনি গড়ে তোলেন সৎসঙ্গ তপোবন বিদ্যালয়, সৎসঙ্গ মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কসপ, সৎসঙ্গ প্রেস ও পাবলিকেশন হাউস, সৎসঙ্গ কুঠির বিভাগ, সৎসঙ্গ ব্যাংক, পূর্তকার্য বিভাগ, বিশ্ববিজ্ঞান কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ১৯৪৬ সালে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র স্বাস্থ্যগত কারণে বায়ু পরিবর্তনের জন্য সপরিবারে ভারতে যান। রেখে যান বিশাল কর্মযজ্ঞ। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগ হলে নানাবিধ জটিলতার কারণে ঠাকুর আর বাংলাদশে ফিরে আসেননি।
বিজ্ঞাপন
সৎসঙ্গ আশ্রমের সভাপতি ড. রবীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতসহ সারাবিশ্বে প্রায় কয়েক কোটি ভক্ত রয়েছে তার। যারা আজও প্রদ্ধা হেমায়েতপুরের পূণ্যভূমির উদ্দেশ্যে প্রণাম নিবেদন করে থাকেন। প্রতি বছর দুটি উৎসব হয় যেখানে বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ভক্তরা পূণ্যভূমিতে পূণ্যলাভের আশায় আগমন করেন।
সৎসঙ্গের সম্পাদক রঞ্জন সাহা বলেন, মানসিক হাসপাতালের অভ্যন্তরে যেসব স্মৃতি রয়েছে তা মানসিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই দাঁড়িয়ে আছে। এইসব স্থাপনা মানসিক হাসপাতালের কার্যক্রমকে কখনো বাধার সৃষ্টি করেনি।
তিনি বলেন, সৎসঙ্গ কর্তৃপক্ষ বহুবার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকার প্রধানের কাছে আবেদন জানিয়েছেন যাতে করে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলেন্দ্রের ফেলে যাওয়া ভবনগুলোকে প্রত্ত্বতাত্বিক বিভাগের আওতায় নিয়ে আসা হয়। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
একাধিক ভক্তের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ষড়যন্ত্র করে ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত স্থাপনাগুলো কৌশলে ভেঙে ফেলে স্মৃতি চিহ্ন মুছে দিতে তৎপরতা চালাচ্ছে। যা আমাদের ঠাকুর ভক্তকূলে আঘাত হেনেছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি সরকারের কাছে জোড়ালো আহ্বান জানাচ্ছি, অবিলম্বে ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত স্থাপনাগুলো পুরাকীর্তি বিভাগের আওতায় এনে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
এ বিষয়ে পাবনার জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, এ ঘটনাটি আমি ভালোভাবে জানি না। বিষয়টি জেনে তারপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
রাকিব হাসনাত/এসপি