ভারত থেকে আসা ২০০ টন তরল অক্সিজেন সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছানোর পর থেকেই চলছে খালাস কার্যক্রম। এর মধ্যে একটি ট্যাংকলরি ২০ টন তরল অক্সিজেন নিয়ে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। আরেকটি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

রোববার (২৫ জুলাই) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্যাংকলরিটি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্টের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাকি ট্যাংকলরিগুলো পর্যায়ক্রমে অক্সিজেন লোড করে নিয়ে যাবে বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন লিন্দের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও প্রশাসন বিভাগের ব্যাবস্থাপক সুফিয়া আক্তার ওহাব। 

এর আগে ভারতের ঝাড়খণ্ড প্রদেশের জামশেদপুর টাটানগর থেকে গতকাল (শনিবার) সকাল ১০টায় ১০টি কন্টেইনারে তরল অক্সিজেন নিয়ে ছেড়ে আসা ইন্দো-বাংলা ট্রেনটি বেলা পৌনে ১১টার দিকে ১০টি কন্টেইনারে তরল অক্সিজেন নিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশ করে।

এ সময় সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ, সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. রাম পদ রায়, লিন্দের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও প্রশাসন বিভাগের ব্যাবস্থাপক সুফিয়া আক্তার ওহাব, গ্যাস বিভাগের বিক্রয় ও বিপণন শাখার মহাব্যাবস্থাপক নুরুর রহমান, বঙ্গবন্ধু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোসাদ্দেক হোসেন, স্টেশন মাষ্টার মো. ইসমাইল হোসেনসহ সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন, রেলওয়ে ও রেলওয়ে পুলিশ, পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগ ছাড়াও অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। 

লিন্দে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও প্রশাসন বিভাগের ব্যবস্থাপক সুফিয়া আক্তার ওহাব ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভালোভাবে আমরা ২০০ টন অক্সিজেন নিয়ে এসে এই অবধি পৌঁছেছি। আমরা এতো অল্প সময়ে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনসহ সবার এতো আন্তরিক সহযোগিতা পাব সেটা ভাবতেই পারিনি। করোনাকালে অক্সিজেনের যে চাহিদা বেড়েছে তা যতটুকু সম্ভব যোগান দিতে লিন্দে চেষ্টা করছে।

লিন্দের গ্যাস বিভাগের বিক্রয় ও বিপণন শাখার মহাব্যাবস্থাপক নুরুর রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, যেহেতু প্রতিটি ট্যাংকলরিতে ২০ টন করে মোট ১০ টাতে ২০০ টন তরল অক্সিজেন লোড হয়ে নারায়ণগঞ্জে যাবে সেক্ষেত্রে অক্সিজেনবাহী প্রতিটি ট্যাংকলরি লোড হতে সময় লাগবে ২ ঘণ্টার মতো লাগার কথা থাকলেও চাপ কম থাকায় প্রায় ৪ ঘণ্টার মতো সময় লাগছে। যেহেতু দুটোর বেশি একসঙ্গে লোড করা যাচ্ছে না সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অক্সিজেন আনলোড করতে পর্যায়ক্রমে ৫ বারে অন্তত ২০ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হবে। 

লিন্দের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিভাগের কান্ট্রি ব্যবস্থাপক রাজিব দেবনাথ ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্টেশনের সামনের দিকে জায়গা কম থাকায় আমরা একসঙ্গে দুটির বেশি ট্যাংকলরিতে অক্সিজেন লোড করতে পারছি না। তাই ১০টি ট্যাংকলরিতে লোড করতে অনেক সময় লাগবে। যদি অক্সিজেনবাহী ট্রেনের বাল্ব বক্সটা (অক্সিজেন আনলোড মেশিন) স্টেশনের সামনে না হয়ে উল্টো দিকে থাকতো তাহলে একসঙ্গে সবগুলোই লোড করা সম্ভব হতো। 

সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. রাম পদ রায় বলেন, এটা আমাদের করোনাকালীন চিকিৎসাসেবায় অক্সিজেনের যে সংকট তা অনেকাংশেই পূরণ করবে। এখন পর্যায়ক্রমে এই অক্সিজেন ভারত থেকে দেশে আসতেই থাকবে। ঢাকায় নেওয়ার পর সারাদেশের চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থ্য বিভাগ এই অক্সিজেন বণ্টন করবে। 

এ সময় জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ বলেন, করোনার এই ক্রান্তিলগ্নে ২০০ টন অক্সিজেন দেশে আসাটা আমাদের অনেক বড় অর্জন। ট্রেনযোগে প্রথম ভারত থেকে আসা এই অক্সিজেন সিরাজগঞ্জ থেকে খালাস হচ্ছে। পরবর্তীতে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এটা সরাসরি ঢাকায় নেওয়া যায় কিনা দেখব। তাহলে আরও সময় বাঁচবে।

শুভ কুমার ঘোষ/আরএআর