শেরপুর সদরের কামারের চর থেকে দেড় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই বেনুয়ার চর গ্রাম। এ গ্রামেই থাকেন এলাকার সবার পরিচিত নুর ইসলাম (৪০)। কোথাও কেউ সাপের সন্ধান দিলে তিনি সেগুলো সংগ্রহ করে বাড়িতে এনে রাখেন। 

নুর ইসলামের দাবি সেই ছোটবেলা থেকেই তিনি স্বপ্নে সব সময় সাপ দেখতেন। অনেক সময় ভয়ে ঘুমের মধ্যেও চিৎকার করতেন।

এসব দুঃস্বপ্ন থেকে রক্ষা করতে মা-বাবা তার গলায় বেঁধে দিয়েছিলেন নানা রকম তাবিজ। কিন্তু কোনো কিছুই সাপের কাছ থেকে তাকে আলাদা করতে পারেনি।

ছোটবেলার একটি মজার ঘটনা জানান নুর ইসলাম। তিনি বলেন, একদিন এক শিক্ষার্থীর কলম চুরি হয়। এরপর শ্রেণি শিক্ষক সব ছাত্রের পকেট তল্লাসি করা শুরু করেন। এক সময় তার পকেট তল্লাসির সময় বের হয়ে আসে বিষধর সবুজ রঙের একটি সাপ। এটা দেখে ভয়ে দৌড় দেন ওই শিক্ষক।

নুর ইসলামের ছেলে জীবন মিয়া বলেন, আমি ছোট থেকেই দেখতাম বাবা বড় বড় বিষধর গোঁখড়া নিয়ে খেলে। সাপ নিয়েই কাটে তার সারাবেলা। কারও বাসা বাড়িতে ইঁদুরের গর্তে বিষধর সাপ দেখলেই বাবাকে ফোন দেওয়া হয়। এরপর তিনি উদ্ধার করেন।

প্রতিবেশী বাবুল মিয়া ঢাকা পোস্টক জানান, নুর ইসলাম চাচা একজন সাদা মনের মানুষ। উনি সবসময় মানুষের উপকারের কথা ভাবেন। অনেক ভণ্ড সাপুড়ে ও কবিরাজ আছে যারা মানুষকে ধোঁকা দিয়ে টাকা আদায় করেন। কিন্তু আমাদের প্রতিবেশী নুর ইসলাম চাচা এসব কখনই করেন না। 

এ ব্যাপারে ৬ নং বেনুয়ার চর ইউপি চেয়ারম্যান সুরুজ মাস্টার ঢাকা পোস্টকে বলেন, নুর ইসলাম আমাদের গর্ব। তার পুরো দিন কাটে সাপ নিয়ে। মানুষের বাড়ি থেকে বিষাক্ত সাপ উদ্ধার করা তার প্রধান পেশা। বড় বড় বিষধর সাপকে সে কিভাবে বশ করে সেটা দেখার জন্য অনেক দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসে।

এ ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল কাশেম মোহাম্মদ আনওয়ারুর রউফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন যেহেতু বর্ষাকাল, এই সময়ে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা বাড়ে। সাধারণত বিষধর সাপ সহজেই কাউকে দংশন করে না। তবে যদি কখনো কাউকে বিষধর সাপ দংশন করে সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিকটস্থ জেলা হাসপাতাল বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা উচিত। এ জন্য ৪ ঘণ্টার মধ্যে সাপে কাটা রোগীর শরীরে স্ন্যাক ভেনম ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে তার জীবন বাঁচানো সম্ভব। অনেক সময় আমরা খবর পাই, বিষধর সাপে কাটা রোগীকে ওঝা বা কবিরাজের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এটা একটি সামাজিক কুসংস্কার। যা মোটেও কাম্য নয়।

সৌরভ/এমএএস