অনেকদিন আগে থেকেই কক্সবাজার সদর উপজেলার বৃহত্তর ঈদগাঁও বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে প্রসিদ্ধ। যুগে যুগে এর প্রসার ঘটেছে। কিন্তু সদর উপজেলার সঙ্গে এর দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটারের মতো। আবার তাদের সদরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয় আরেকটি উপজেলার ওপর দিয়ে। 

৫০ বছর আগে থেকে উপজেলার নাগরিক হওয়ার স্বপ্ন বুনেন বৃহত্তর ঈদগাঁওবাসী। ২০০৯ সালে গঠিত হয় ঈদগাঁও উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটি। সেই থেকে জোরালো হয় উপজেলা করার দাবি।

অবশেষে ৫০ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কক্সবাজার জেলার নবম উপজেলা হিসেবে ‘ঈদগাঁও’কে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সোমবার (২৬ জুলাই) প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) ১১৭তম সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়।

চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি ঈদগাঁও থানা হিসেবে যাত্রার পাঁচ মাসের মাথায় উপজেলার ঘোষণা আসায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ঈদগাঁওর সর্বস্তরের মানুষ।

এদিকে, এ খবরে উপজেলার আমজনতার মাঝে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। একে অপরকে মিষ্টি মুখ করিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করছেন তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন অনেকে।

ঈদগাঁওকে উপজেলা ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, একটি সরকারি হাসপাতাল করা যায়নি। একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন করা যায়নি। করা যায়নি একটি সরকারি কলেজ ও একটি স্কুলও। দীর্ঘ ৪০ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজারে গিয়ে সেবা নিতে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। প্রশাসনিক উপজেলার অভাবে ঈদগাঁওয়ের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে একপ্রকার বঞ্চিত ছিল। উপজেলা ঘোষণায় ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে ঈদগাঁওয়ের বাসিন্দারা।

ঈদগাঁও উপজেলা বাস্তবায়ন পরিষদের সচিব ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে ঈদগাঁওকে উপজেলায় রূপান্তরের দাবি করে আসছিলেন এ অঞ্চলের অধিবাসীরা। দীর্ঘ ৫০ বছর পর রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদগাঁওবাসীর স্বপ্নপূরণ করেছেন। প্রাচীনকাল থেকে বৃহত্তর ঈদগাঁও বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে প্রসিদ্ধ। যুগে যুগে তার প্রসার ঘটেছে। কিন্তু সদর উপজেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় আরেকটি উপজেলার ওপর দিয়ে এ অঞ্চলের লাখো জনতাকে প্রশাসনিক সেবা পেতে কক্সবাজার যেতে হতো। এতে দুর্ভোগ বাড়ত।

তিনি আরও বলেন, তখন থেকেই বৃহত্তর ঈদগাঁওর ৫ ইউনিয়ন নিয়ে উপজেলা বাস্তবায়নের দাবি ওঠে। কিন্তু তা আলোর মুখ দেখেনি। আমি ২০০৯ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসরের পর এলাকায় এসে ঈদগাঁওকে স্বতন্ত্র উপজেলা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। তখনই কবি মুহম্মদ নুরুল হুদাকে (বর্তমানে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক) সভাপতি ও আমি সদস্য সচিব হয়ে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের পর মুক্তিযোদ্ধা মাস্টার নুরুল আজিমকে কো-অর্ডিনেটর করে প্রশাসনিক দফতরে যোগাযোগ শুরু করি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারকে নিয়ে আলাদা করে ভাবেন। পর্যটন রাজধানী হিসেবে কক্সবাজারকে জাতীয় অর্থনীতির সূতিকাগার হিসেবে গড়তে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, গভীর সমুদ্র বন্দর, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, মেরিন ড্রাইভ, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও রেললাইনসহ নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। সরকারি সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে ঈদগাঁওকে উপজেলা ঘোষণা করায় জেলাবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

আগে সদর উপজেলায় থাকা ঈদগাঁও, ইসলামপুর, ইসলামাবাদ, জালালাবাদ ও পোকখালী ইউনিয়ন নিয়ে অনুমোদন পেয়েছে ঈদগাঁও উপজেলা। 

মহিব/এমএএস/জেএস