ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের মধুমতী নদীর কাছে পশ্চিম চরবর্ণি গ্রাম। এ গ্রামেই ৩৫ বছর বয়সী মানসিক ভারসাম্যহীন রবিউল ইসলাম মোল্লা ১৫ বছর ধরে একটি ঘরে শিকলবন্দি অবস্থায় দিন-রাত কাটাচ্ছেন। 

পশ্চিম চরবর্ণি গ্রামের বাসিন্দা দরিদ্র রিকশা চালক মো. নুরুল মোল্লা (৫৮) ও আসমানি বেগম দম্পতির তিন ছেলের মধ্যে রবিউল সবার বড়। ছোটবেলায় রবিউল খুবই দূরন্ত ছিল। নয় বছর বয়সে একবার জ্বর হয় রবিউলের।

এরপর জীবনের সর্বনাশ শুরু হয় তার। তছনছ করে দেয় পুরো পরিবারটিকেই। আস্তে আস্তে হাত-পা শুকিয়ে যেতে থাকে। মুখের কথা হারিয়ে যায়। কবিরাজ ও ডাক্তার সব দেখানো হলেও আর সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেনি রবিউল।

রবিউলের মা আসমানী বেগম জানান, রবিউল ১৬/১৭ বছর বয়সেই চূড়ান্তভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। শীত বা গরম কোনো অনুভূতিই টের পায় না। শরীরে কোনো কাপড় রাখেন না। আস্তে আস্তে তার আচরণ হয়ে পড়ে উন্মাদের মতো।

তিনি আরও জানান, মারধর করা, জিনিসপত্র ভাঙচুর করা যেন তার নেশা হয়ে ওঠে। অবশেষে বাধ্য হয়ে একটি সুপারি গাছের সঙ্গে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। এভাবে কেটে গেছে তার জীবনের ১৫টি বছর।

যে গাছে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে সেটির চারপাশে প্রায় ৭ ফুট গভীর গোলাকার মাটির গর্তে করেছে রবিউল। গর্তটি নখ দিয়ে খুঁড়ে খুঁড়ে নিজেই তৈরি করেছেন তিনি।

রবিউলের বাবা মো. নূরুল মোল্লা বলেন, ঢাকা ও ফরিদপুরে এমন কোনো ডাক্তার কবিরাজ বাদ নেই, সব দেখাইছি। কাজের কাজ কিছুই হয় নাই। এখন আশা ছাইড়া দিছি। দেখতে দেখতে রবিউলের জীবনে ১৫টি বছর একটি মাটির বাংকারেই কাইটা গেল।

তিনি আরও বলেন, আমার ছেলেকে শিকলে বাধ্য হয়েই বেঁধে রেখেছি। ও সব সময় উলঙ্গ থাকে। এভাবে বাইরে গেলে প্রতিবেশীরা বিব্রত হয়। তাই বাধ্য হয়েই এ কাজ করতে হয়েছে।

ময়না ইউপি চেয়ারম্যান নাসির মো. সেলিম বলেন, রবিউলের বিষয়টি খুবই দুঃখের। ১৫ বছর ধরে ছেলেটি একটি ঘরে বন্দি। ওর পরিবার সাধ্যমতো চেষ্টা করেও সুস্থ করতে পারেনি। আমরা রবিউলকে প্রতিবন্ধী ভাতা করে দিয়েছি।

এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ঝোটন চন্দ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে রবিউলের চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

জহির হোসেন/এমএএস