পড়ে রইল বউভাত অনুষ্ঠানের খাবার
বউভাতের জন্য নাস্তা ও দুপুরের খাবার প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। অপেক্ষায় কনের বাড়ির লোকজন। অর্ধশতাধিক মেহমানের জন্য পথ চেয়ে বসে আছেন নতুন স্বজনরা। মোবাইল ফোনে জেনেছেন বরযাত্রী রওনা দিয়েছে। নতুন বউ দেখার জন্য ছেলের বাড়ির আত্মীয়-স্বজনরাও অপেক্ষায়। কিন্তু নতুন বউ ঘরে আসার আগেই বজ্রপাতে ১৭ জন মারা যাওয়ার খবর এল। ঘরে ফিরল ১৬ জনের মরদেহ। লাশের ভারে সূর্যনারায়ণপুর গ্রামে নেমেছে গভীর অন্ধকার।
বুধবার (৪ আগস্ট) দুপুর ১২টায় বউভাত অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বজ্রপাতে ১৭ জনের মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব-আল-রাব্বী।
বিজ্ঞাপন
উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের পদ্মা নদীর দক্ষিণ পাঁকা ঘাটে এ ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। আহতরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় নিহতরা হলেন- জমিলা বেগম (৫৮), তবজুল (৭০), সাদল (৩৫), রফিকুল (৬০), লেচন (৫০), সজীব (২২), টকি বেগম (৩০), আলম (৪৫), পাজু (৪০), সহবুল (৩০), বেলি বেগম (৩২), বাবুল (২৬), মৌসুমী (২৫), টিপু সুলতান (৪৫), বাবু (২০) ও আশিকুল ইসলাম (২৪)। তারা সকলেই সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। রফিকুল পাঁকা ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি নৌকার মাঝি ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় বাসিন্দা ও নিহতের স্বজন সূত্রে জানা যায়, মাত্র দুদিন আগে বিয়ে হয়েছিল আল মামুনের। করোনা মহামারির কারণে অনেকটা গোপনেই বিয়ে হয় শরিফুল ইসলামের ছেলে আল মামুনের (২৪)। বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়িতেই অবস্থান করছিলেন বর আল মামুন। কথা ছিল প্রায় ৫০ জন অতিথি নিয়ে বর-কনেকে ঘরে আনবেন বর আল মামুনের পরিবার।
বর আল মামুনের চাচাতো ভাই ইসাহাক আলী জানান, করোনার কারণে গোপনেই বিয়ে হয়েছিল। তাই নববধূকে আনতে বরপক্ষের ৫০ জন অতিথি যায়। কিন্তু একটি বজ্রপাত সব ওলটপালট করে দিল। নতুন কনের জন্য বাড়ি সাজানোর পরিবর্তে হাতে নিতে হচ্ছে দা-কোদাল।
কনে সুমি খাতুনের খালা ইসমতা আরা বেগম জানান, দুদিন আগে (সোমবার) হঠাৎ করেই বিয়ে হয় তাদের। এরপর থেকেই বর মামুন কনের বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। বউভাত অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছিল বাড়িতে। নাস্তা থেকে শুরু করে রান্নার সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছিল। অপেক্ষায় ছিলাম বরপক্ষের অতিথিদের বরণ করতে। কিন্তু এসবের কিছুই হলো না। বিয়েবাড়ির আনন্দ পরিণত হয় ঘোর বিষাদে। বরযাত্রীদের জন্য রান্না করা খাবার থেকে শুরু করে সব প্রস্তুতি পড়ে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বুধবার ৫০-৫৫ জন আত্মীয়-স্বজন নিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় রওনা হন বরযাত্রীরা। নৌকাটি দক্ষিণ পাঁকা গ্রামের ঘাটে এসে পৌঁছাতেই শুরু হয় বৃষ্টি। এ সময় বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে আশ্রয় নেন ঘাটের ছাউনিতে। সেখানেই বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়।
মো. জাহাঙ্গীর আলম/ওএফ