রূপগঞ্জ অগ্নিকাণ্ড : শোকাতুর পরিবেশে ৯ জনের দাফন
বুধবার সন্ধ্যার পর জানাজার পর তাদের দাফন সম্পন্ন হয়
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কিশোরগঞ্জের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সের নিখোঁজ ২০ শ্রমিকের মধ্যে ৯ জনের লাশ শোকাতুর পরিবেশে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যার পর জানাজার পর তাদের দাফন সম্পন্ন হয়।
এর আগে বুধবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে উপস্থিত স্বজনদের কাছে ২৪ মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের মধ্যে কিশোরগঞ্জের ৯ শ্রমিকের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে স্বজনরা লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে সন্ধ্যার আগে নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছালে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। স্বজনদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন মরদেহ দাফনের জন্য প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দিয়েছে। লাশ দাফনকাজে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একজন করে কর্মকর্তা উপস্থিত থেকে দাফনকাজে সহায়তায় করেন।
প্রথম দফায় হস্তান্তর হওয়া কিশোরগঞ্জের ৯ জন শ্রমিকের মরদেহের মধ্যে করিমগঞ্জ উপজেলার ছয়জন ও সদর উপজেলার তিনজন রয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
নিহতরা হলেন জেলার কমিরগঞ্জ উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের মাথুরাপাড়া গ্রামের তাহের উদ্দিনের ছেলে নাঈম ইসলাম (১৮), একই গ্রামের খোকন মিয়ার স্ত্রী জাহানারা (৩৫), একই উপজেলার জাফরাবাদ ইউনিয়নের সাইটুটা গ্রামের স্বপন মিয়ার স্ত্রী সাগরিকা (২২), একই ইউনিয়নের বাদেশ্রীরামপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মুন্না (১৫), একই উপজেলার বারঘড়িয়া ইউনিয়নের চাতাল গ্রামের সুরুজ আলীর মেয়ে ফারজানা (১৯) ও একই উপজেলার নোয়ামবাদ ইউনিয়নের মোলামখারচর গ্রামের সুজন মিয়ার মেয়ে ফাতেমা আক্তার (১৫)।
জেলার সদর উপজেলার কর্শাকড়িয়া ইউনিয়নের শেহড়া গ্রামের আবদুল কাইয়ুমের মেয়ে খাদিজা (১৫), একই উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের ব্রহ্মণকান্দি গ্রামের নিজাম উদ্দিনের মেয়ে শাহানা (১৫), একই উপজেলার কর্শাকড়িয়া ইউনিয়নের জালীয়া গ্রামের মাহতাব উদ্দিনের স্ত্রী শাহানা আক্তার (৪৪)।
স্ত্রী শাহানার লাশ নিয়ে বাড়িতে ফেরা করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের মথুরাপাড়া গ্রামের খোকন মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, কারখানায় আগুন লাগার সময় শাহানা আমার ছোট ভাইকে ফোন করেছিল। তখন সে বলেছিল যে সে তিনতলায় আটকা পড়েছে। ওখান থেকে বাহির হওয়ার দরজা ম্যানেজার বন্ধ করে দিয়েছে, তাই আর বাহির হতে পারেনি। তিনি তার স্ত্রীকে হারিয়ে দুই সন্তান নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। সরকারের কাছে এর উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও কর্তৃপক্ষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম ঢাকা পোস্টকে জানান, রূপগঞ্জের সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত সাত শিশু শ্রমিকসহ কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন বয়সের ২০ নারী-পুরুষ শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯ জনের মরদেহ আজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর হয়েছে। এখনো আরও ১১ জন শ্রমিকের পরিবার তাদের স্বজনদের লাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
মোহাম্মদ শামীম আলম আরও জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে পাওয়া নিখোঁজদের তালিকায় জেলার সদর উপজেলার আটজন, করিমগঞ্জ উপজেলার আটজন, কটিয়াদী উপজেলার তিনজন এবং মিঠামইন উপজেলার একজনের নাম রয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার পর পর মীনা আক্তার (৩০) নামে জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার এক নারী শ্রমিকের মরদেহ বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের কুকিমাধব গ্রামের হারুন অর রশিদের স্ত্রী নিহত মিনা আক্তারের (৩৩) পরিবারকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল থেকে দুই লাখ টাকার অনুদান দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তিনজন আহত শ্রমিকের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। নতুন করে যাদের লাশ বাড়িতে আসতেছে তাদের পরিবারকেও অনুদান দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকার হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় আগুন লাগে। এতে ৫২ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফরের পক্ষ থেকে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আগুনে পুড়ে মৃত্যুর ঘটনায় রূপগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ূন কবীর বাদী হয়ে কারখানা মালিক আবুল হাসেম ও তার চার ছেলে, প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন।
বিজ্ঞাপন
এসকে রাসেল/এনএ