আজ ১৩ ডিসেম্বর (রোববার)। বগুড়া হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা শহরের ফুলবাড়ী ও পৌর পার্ক এলাকায় পাক বাহিনীকে পরাস্ত করে এবং আত্মসমর্পণে বাধ্য করার মধ্য দিয়ে বগুড়াকে হানাদার মুক্ত করে।

সেদিনের সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ভোর থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা বগুড়াকে শত্রুমুক্ত করার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। এ জন্য তারা শহর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তরে নওদাপাড়া, চাঁদপুর ও ঠেঙ্গামারা এলাকায় নিজেদের অবস্থান সুসংহত করেন। পরে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর ৬৪ মাউন্টেইন রেজিমেন্টের বিগ্রেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার প্রেম সিংহের নেতৃত্বে ট্যাংক নিয়ে তারা শহরের দিকে অগ্রসর হন। ওইসব এলাকার অসংখ্য যুবকও সেদিন তাদের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। 

১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর। বগুড়ায় তখন বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা। ১৩ ডিসেম্বরের আগে ১০ ডিসেম্বর থেকে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মরণ কামড় দিয়েছিল। আকাশে মিত্র বাহিনীর বোমারু বিমান, মাটিতে মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনীর অভিযানে দিশেহারা পাক হানাদার বাহিনীর কোণঠাসা হয়ে পড়ে। নভেম্বরের শেষ দিকে সারিয়াকান্দি থানা প্রথম হানাদার বাহিনী মুক্ত হওয়ার পর একে একে বগুড়ার সোনাতলা, গাবতলী, শিবগঞ্জ, ধনুট ও শেরপুর মুক্ত হয়। এরপর একসঙ্গে ১৩ ডিসেম্বর বগুড়া সদর, কাহালু, নন্দীগ্রাম, দুপচাঁচিয়া থানায় হানাদারদের পতন ঘটে। আদমদিঘী ১২ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয়। তুমুল লড়ায়ের পর ১৩ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত বগুড়া শহরে বারুদের গন্ধে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।

মুক্তিযোদ্ধারা আরও জানান, ১৩ ডিসেম্বর বগুড়ার কয়েকটি জায়গায় পাক হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। বগুড়ায় আব্দুস সবুর সওদাগর ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতা সৈয়দ ফজলুল আহসান দিপুর নেতৃত্বে দুটি দল প্রায় একই সঙ্গে বগুড়া শহরে প্রবেশ করে। ২ ডিসেম্বর তারা সারিয়াকান্দি ও গাবতলী থেকে ১১ জন পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যকে আটক করে। এর মধ্যে পাঁচজন মারা পড়ে। ছয়জনকে মিত্র বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। দল নিয়ে ঝড়ের গতিতে তারা বগুড়ায় এসে পৌঁছান ৮ ডিসেম্বর।

ফুলবাড়ি এসে হানাদারদের সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ের পর তারা শহরের ভেতরে প্রবেশ করে আবার ফিরে যান ফুলবাড়ি কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মরহুম মখলেসুর রহমানের বাড়িতে। ১৩ তারিখেই মিত্র বাহিনী বগুড়া শহর পুরো নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর বিশিষ্ট প্রকৌশলী আওরঙ্গজেবের নেতৃত্বে সারিয়াকান্দি থেকে তারা শহরে পৌঁছান। 

জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম মন্টু বলেন, ১৩ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে একদিন বগুড়া শহর মুক্ত হয়েছিল। মিত্র বাহিনীর সঙ্গে তারা ঠেঙ্গামারা এলাকা থেকে শহরে প্রবেশ করেন।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সাবেক আহ্বায়ক মাসুদার রহমান হেলাল বলেন, ১৩ ডিসেম্বর বগুড়া হানাদার মুক্ত হয়। ওই দিন মহাস্থানে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাক বাহিনীর সম্মুখযুদ্ধ হয়। এতে পাক বাহিনীর অফিসারসহ বেশ কয়েকজন সৈন্য নিহত হয়েছিল। পরে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা বাঘোপাড়ায় অবস্থান নেন এবং ১৪ ডিসেম্বর তিনিসহ মুক্তিযোদ্ধারা বগুড়া শহরে প্রবেশ করেন। পরে পরাজিত পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যদেরকে বৃন্দাবনপাড়া ওয়াপদা এলাকায় কাঁটা তারের ঘেরায় ২-৩ দিন রাখা হয়েছিল। শহরের অ্যাডওয়ার্ড পার্কে পাক বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল।

আরএআর