রাজবাড়ীতে লক্ষ্যমাত্রার বেশি পাট চাষ, দামে খুশি কৃষক
রাজবাড়ীতে এবার লক্ষ্যমাত্রার থেকে ১ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে বেশি পাট চাষ করা হয়েছে। ফলনও হয়েছে বাম্পার। দাম ভালো পাওয়ায় জেলার কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
সোনালী আঁশ পাটের উৎপাদন ভান্ডারখ্যাত রাজবাড়ীতে চলতি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ পাটের আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া পাট চাষের অনুকূলে থাকায় এবং আগাম বন্যা না হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে। পাটের এমন বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। তবে পানি সংকটে দূর-দূরান্তে নিয়ে পাট জাগ দেওয়ায় পরিবহন খরচ ও শ্রমিক সংকটে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
বিজ্ঞাপন
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হলেও ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪৭ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১০ হাজার ১২০ হেক্টর, পাংশায় ১১ হাজার ৬৮০ হেক্টর, কালুখালীতে ৯ হাজার ৩৫০ হেক্টর, বালিয়াকান্দিতে ১২ হাজার ৫৫০ হেক্টর এবং গোয়ালন্দ উপজেলায় ৪ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। উন্নতমানের বীজ, সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ এবং সেচ সুবিধা নিশ্চিত হওয়ায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে।
গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউপির ২ নং ওয়ার্ড মৃধাডাঙ্গা এলাকার কৃষক আজাহার নলিয়া বলেন, ৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৮ থেকে ১০ মণ পাট উৎপাদন হয়েছে। সার, বীজ, নিড়ানি ও পাট কাটা, জাগ দেওয়ার জন্য কামলা, জাগ দেওয়ার পরিবহন খরচ বাবদ প্রতি বিঘায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বাজারে পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। মৌসুম শেষ পর্যন্ত দাম এভাবে থাকলে কৃষকরা প্রচুর লাভবান হবে এবং পাট চাষে আরও আগ্রহী হয়ে উঠবে।
বিজ্ঞাপন
উপজেলার দৌলতদিয়া ইউপির ৭ নং ওয়ার্ডের রোকন মোল্লা পাড়া এলাকার কৃষক রহিম ফকির বলেন, গত বছর ৫ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করে ভাল দাম পাওয়ায় এবার ১০ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে।
সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের চরধোপাখালী গ্রামের ওয়াজেদ আলী শেখ বলেন, এবার পাটের ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু এলাকায় পাট জাগ দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি নেই। ফলে দূরে পরিবহন ভাড়া করে নিয়ে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া এবার শ্রমিক সংকট রয়েছে। শ্রমিকের মজুরিও বেশি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবার পাটে আরও বেশি লাভবান হবো।
গোয়ালন্দ বাজারের পাট ব্যবসায়ী মোল্লা ট্রেডার্সের মালিক মজিবর রহমান মজি জানান, এবার এ অঞ্চলে ব্যাপক পাটের আবাদ হয়েছে। গতবারের তুলনায় এবার পাটের মানও ভালো। তবে কিছু কিছু জায়গায় পানির অভাবে ঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করতে না পারায় পাটের মান হ্রাস পেয়েছে। তানাহলে কৃষকরা পাটের আরও দাম পেত।
এ প্রসঙ্গে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক এসএম শহীদ নুর আকবর জানান, জেলায় এ বছর পাট উৎপাদনে অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ। অর্জিত হয়েছে ৪৭ হাজার ৯৮০ হেক্টর। এবার পাটের দামও ভালো। পাটের বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা আগামীতে আরও বেশি পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবে।
মীর সামসুজ্জামান/এসপি