ফিস্টুলায় আক্রান্ত মায়েদের বিনামূল্যে অপারেশনের ব্যবস্থা
সারাদেশে প্রসবজনিত সমস্যার কারণে প্রায় ২০ হাজার ফিস্টুলা রোগী রয়েছে। ফিস্টুলায় আক্রান্ত মায়েদের বিনামূল্যে অপারেশনের ব্যবস্থা করছে মিশনারী হাসপাতাল ল্যাম্ব হাসপাতাল।
বগুড়ায় ১১ জন মা ফিস্টুলা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, এরমধ্যে ৬ জনের অপারেশন করা হয়েছে। এবং অপারেশন হওয়া মায়েরা এখন স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। ল্যাম্ব হাসপাতালে সারাবছর প্রায় ৬০০ মায়ের ফিস্টুলা অপারেশন করা হচ্ছে। সরকারিভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে ফিস্টুলা মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে তারা।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ফিস্টুলা আক্রান্ত মায়েদের সেবায় ল্যাম্ব হাসপাতালের আয়োজনে বগুড়ায় ভার্চুয়াল কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মশালায় উপরোক্ত বিষয়সমূহ বিশদ আলোকপাত করা হয়।
ভার্চুয়াল কর্মশালায় বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আমজাদ হোসেন মিন্টুর পরিচালনায় কর্মশালার উদ্বোধন করে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন ডা. গাউসুল আজিম চৌধুরী। কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের শামসুজ্জামান, ডা. কানিজ ফাতেমা ও ডা. অনিমেষ বিশ্বাস। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ল্যাম্ব হাসপাতালের ফিস্টুলা প্রজেক্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার মাহাতাব লিটন, ফিস্টুলা বিষয়ক বিশদ প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন প্রজেক্টের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার ডা. তাহরিমা হোসেন।
বিজ্ঞাপন
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. গাউসুল আজিম চৌধুরী বলেন, সচেতনতার মাধ্যমে দেশে ফিস্টুলা রোগীর সংখ্যা কমানো যেতে পারে। মায়েদের ফিস্টুলা রোগ হয় প্রসব জনিত সমস্যার কারণে। সন্তান প্রসবকালীন সময়ে দীর্ঘ সময় নেয়ায়। এরফলে একজন মা তার পরিবার থেকে আলাদা জীবন যাপন করে। পরিবারে বা সমাজে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। যদি প্রসবকালীন সচেতনতা সমাজের সকল স্তরে পৌঁছানো যায়, তবে ফিস্টুলা রোগ কমানো যাবে। ল্যাম্ব হাসপাতাল এ রোগে আক্রান্ত মায়েদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে বিনামূল্যে অপারেশনের ব্যবস্থা করেছে।
কর্মশালায় ইউএনএফপিএ'র প্রতিনিধিরা বলেন, ফিস্টুলা রোগে আক্রান্ত একজন মায়ের স্বাভাবিক জীবনকে অস্বাভাবিক করে তোলে। এর কারণ প্রসবকালীন দীর্ঘ সময়। যার ফলে সন্তান প্রসবের সময় মাসিকের রাস্তা ফেটে মলদ্বারের সঙ্গ এক হয়। এরফলে সবসময় তার শরীর থেকে মল বা পানি বের হতে থাকে। এ কারণে তার শরীর থেকে গন্ধ বের হয়। ফলে তাকে সমাজ ও পরিবার থেকে আলাদাভাবে রাখা হয়। পরিবারের সচেতনতার অভাবে অনেকেই কষ্টে থাকেন। বাংলাদেশে প্রায় ২০ হাজার রোগী রয়েছে। যার মধ্যে প্রতিবছর প্রায় ৬০০ জনের চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে এবং এ অপারেশন যে কোনো গাইনি ও অবস'র চিকিৎসকরা করতে পারে না। তবে গাইনি ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ দেয়া গেলে তারা এ অপারেশন করতে পারবে। প্রসবকালীন সচেতনতায় পারে ফিস্টুলা রোগীদের সংখ্যা কমাতে।
কর্মশালায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ল্যাম্ব হাসপাতালে প্রতিনিধিরা জানান, বগুড়ায় ১৩ জন এমন রোগী পাওয়া গিয়েছিল। যার মধ্যে ১১ জন মা ফিস্টুলা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এরমধ্যে ৬ জন মায়ের অপারেশন করা হয়েছে, যারা এখন সুস্থ জীবন যাপন করছেন। একজন মায়ের ফিস্টুলা অপারেশন করার পর ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে পারে। অপারেশনের পর তিনমাস পর্যন্ত একজন মাকে ফলোয়াপে রাখা হয়। এ রোগে আক্রান্ত প্রতিটি মায়ের অপারেশন ল্যাম্ব হাসপাতালে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বিনামূল্যে করা হয়। যা প্রচার হলে এ রোগে আক্রান্ত অনেক মায়েরা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন বলেও তারা মনে করেন।
কর্মশালায় বগুড়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক করতোয়ার বার্তা সম্পাদক প্রদীপ শংকর, বগুড়া প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ও নিউজ২৪ এর বগুড়া প্রতিনিধি আব্দুস সালাম বাবু, বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জেএম রউফ, ইত্তেফাকের বগুড়ার স্টাফ রিপোর্টার মিলন রহমান, বৈশাখী টিভির কমলেশ মোহন্ত শানু, বণিক বার্তার বগুড়া প্রতিনিধি এইচ আলিম, ঢাকা পোস্ট বগুড়ার জেলা প্রতিনিধি সাখাওয়াত হোসেন জনি, ভোরের দর্পণের স্টাফ রিপোর্টার ইলিয়াস হোসেন, নতুনখবর ডটকমের বার্তা সম্পাদক তানসেন তালুকদারসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
সাখাওয়াত হোসেন জনি/এমএএস