তিস্তায় বিলীন আরও ৫০ বসতঘর
গঙ্গাচড়ায় তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, বসতঘর
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীতে পানি কমলেও থামেনি ভাঙন। যতই দিন যাচ্ছে ভারী হচ্ছে রাক্ষুসে তিস্তার পেট। গেল তিন দিনে নদী তীরবর্তী বিনবিনা চরের অর্ধশত ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত গৃহহীন পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে।
এদিকে পূর্ব বিনবিনা মোড় হতে বেড়ি বাঁধ যাওয়ার রাস্তাটিতেও নজর পড়েছে তিস্তার। অল্প অল্প ভাঙনে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে চারপাশ। অব্যাহত ভাঙনে নদীর পানিতে ডুবে আছে চাষাবাদের জমি। এখন সেখানে রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট ধরে চলাচল দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা চরসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, নদী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। তা না হলে চরের স্কুল, মাদরাসা ও ঈদগাহ মাঠও নদীগর্ভে হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
জানা গেছে, ঈদুল আজহার কদিন আগে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়। এতে কিছু এলাকা তলিয়ে যায়। পরে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র হতে থাকে ভাঙন। তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বিনবিনার পাকারাস্তা সংযুক্ত বাঁধটি ভেঙে পানির ধাক্কায় আঘাত হানে বেড়িবাঁধের বুকে।
বিজ্ঞাপন
প্রায় ৫ কিলোমিটার ভেঙে যাওয়াতে পূর্ব বিনবিনার তোফাজ্জল, সুজা, মাহফুজার, শাফি, আলম, এবজাল, আব্দুর রহমান, লালটু, চান, নজরুল, ফজলু, রাজ্জাক, বক্কর, কুদ্দুছ, বেলাল, আকাশ, জেয়াদ, মতিয়ার, হাবিবুর, মাসুম, তৈয়ব, আনায়ারুল, মোহাম্মদ আলী, মোস্ত, মান্নান, ইয়াছিন, মমনুর, আমিনুর, আলতাব, আতিকুর, কাদের, সাইয়েদুর, মতিন, বুলু, নওশা, আজিজুলসহ ৫০ পরিবারের বাড়িঘর, আবাদি জমি ও গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
এছাড়া বেড়ি বাঁধ ভেঙে পুরো বিনবিনাসহ পাশের লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার মইষামুড়ির কিছু চাষাবাদের জমিও তলিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিনবিনার চরের রাস্তা, ব্রিজ ভেঙে চলাচলে অসুবিধা দেখা দিয়েছে।
বর্তমানে অব্যাহত ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে বিনবিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। সঙ্গে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে সেখানকার মসজিদ, ফোরকানিয়া মাদরাসা ও ঈদগাহ মাঠটিও। এখন পর্যন্ত ভাঙন রোধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভাঙনকবলিত পরিবারগুলোর হাতে পৌঁছেনি সরকারি সহযোগিতা।
ক্ষতিগ্রস্ত বৃদ্ধ কৃষক তোফাজ্জল হোসেন জানান, ‘পানি কমার পরও ভাঙনের কাছে তার বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। এখন স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বাড়ি করার মতো জায়গা না থাকায় মইষামুড়িতে খাস জমিতে বাড়ি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেখানের লোকজন বাড়ি করতে দেননি। পরে ওই এলাকার রফিকুল নামে একজন তাকে বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় দিয়েছেন। সেখানে কোনোরকমে কষ্টে দিন কাটছে।’
পূর্ব বিনবিনার খলিল মিয়া জানান, ‘বিনবিনা চরসহ পার্শ্ববর্তী মইষামুড়ির কিছু এলাকায় তিস্তার পানি ঢুকে পড়েছে। এখন চাষাবাদের জমি পানিতে তলিয়ে আছে। একারণে এবার কোনো ফসল চাষাবাদ হবে না। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।’
কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু জানান, ‘ঈদের দু’দিন আগে ভাঙনকবলিত এলাকাগুলোতে ভিজিএফ’র চাল বিতরণ করেছেন। এর পরই তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। ঈদ-পরবর্তীতে আর ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে যেতে পারেননি। বর্তমানে ফোনে তাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন।’
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব জানান, ‘বিনবিনিয়া এলাকায় ভাঙন রোধে বালির বস্তা ডাম্পিং করা হচ্ছে। আমরা এলাকায় ভাঙন রোধে কাজ শুরু করেছি। কিন্ত এলাকাটি বেশ দুর্গম। এই জন্য কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। আশা করছি দুই এক দিনের মধ্যে ভাঙন রোধে আমারা সফল হব।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএসআর