আশুগঞ্জ রাইস সাইলোর নির্মাণ কাজে ধীরগতি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে চলছে ১ লাখ ৫ হাজার টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন আধুনিক স্টিল রাইস সাইলোর নির্মাণযজ্ঞ। এ সাইলোটি নির্মিত হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে খাদ্য অধিদফতরের সংগৃহীত চালের উদ্বৃত্ত চাল এখানেই সংরক্ষণ করা হবে। এ ছাড়া সংরক্ষণ করা যাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পার্শ্ববর্তী জেলার চালও।
তবে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে সাইলোটি খাদ্য অধিদফতরের কাছে হস্তান্তরের কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে এখন পর্যন্ত নির্মাণ কাজই শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মহামারির কারণে সীমিত পরিসরে নির্মাণ কাজ চললেও সাইলোর প্রয়োজনীয় মালামাল বিদেশ থেকে আনা যাচ্ছে না। ফলে পুরোদমে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
বিজ্ঞাপন
জেলা খাদ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্য মতে, প্রতি বছর আমন ও বোরো মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে প্রায় ৫০ হাজার টন চাল সংগ্রহ করে খাদ্য অধিদফতর। সংগৃহীত এসব চাল বিতরণের পর উদ্বৃত্ত চাল সাইলো না থাকায় চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদামে পাঠানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাদ্য সংরক্ষণ এবং মজুদ পর্যাপ্ত ও মজবুত করতে আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার প্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, বরিশাল, খুলনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও টাঙ্গাইলে আটটি সাইলো নির্মিত হচ্ছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার আধুনিক স্টিল রাইস সাইলোটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪০ কোটি ৪৫ লাখ ৪৯ হাজার ২৬৪ টাকা।
বিজ্ঞাপন
সাইলোর নির্মাণ কাজের জন্য ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড-ফ্রেমি জয়েন্ট ভেঞ্চারের সঙ্গে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী আধুনিক এ সাইলোতে মোট ৩০টি সাইলো বিন থাকবে। এ ছাড়া পরিদর্শন বাংলো, গোডাউন ও ব্যারাকসহ প্রয়োজনীয় ভবন থাকবে ১৬টি। সাইলো বিনগুলোর প্রতিটির ধারণক্ষমতা ৩ হাজার ৫০০ টন। ইতোমধ্যে ২৯টি সাইলো বিনের অবকাঠামোগত কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
তবে বিনগুলোতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সংযোগজনসহ আনুষাঙ্গিক সকল কাজই বাকি আছে। আর একটি বিনের কাজ এখনো শুরুই হয়নি। সাইলোর নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় অধিকাংশ মালামাল চীন, আমেরিকা ও ইতালি থেকে আনতে হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এসব মালামাল আনতে বিলম্ব হচ্ছে।
সরেজমিনে সাইলো প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় মালামাল না আসায় বিনের কাজ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পে থাকা ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ চলছে। সীমিত পরিসরে স্বল্প সংখ্যক শ্রমিক প্রকল্পের কাজ করছেন। তবে কোনো ভবনের নির্মাণ কাজই শতভাগ সম্পন্ন হয়নি। এ ছাড়া মেঘনা নদীতে জেটি নির্মাণ কাজও বাকি রয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের প্রজেক্ট ইনচার্জ মো. নিজামুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের ২৪ মার্চ থেকে পরবর্তী ৪ মাস নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল। এরপর কাজ শুরু হলেও অনেক শ্রমিক কাজে আসেনি।কাজের অগ্রগতিও আশানুরূপ ছিল না। চলমান কঠোর বিধিনিষেধ শুরুর আগে মজুদকৃত নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে সীমিত পরিসরে কাজ চলছে। তবে করোনার কারণে সাইলোর প্রয়োজনীয় মালামাল বিদেশ থেকে আনতে বিলম্ব হচ্ছে। সেজন্য প্রকল্পের কাজ শেষ করতে কিছুটা সময় লাগছে’।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার প্রকল্পের পরিচালক মো. রেজাউল করিম সেখ বলেন, ‘সাইলোর বেশিরভাগ মালামাল আমেরিকা ও ইতালি থেকে আসে। কিন্তু গত বছর ইতালিতে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতার কারণে কয়েকবার আমাদের শিপমেন্ট বাতিল হয়েছে। নতুন করে আবার এলসি খোলা হয়েছে। এখন মালামাল আসা শুরু করেছে। এগুলো সংযোজন করে নির্মাণ কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন করার পর ট্রায়াল রান হবে। এপ্রিল-মে মাসে হয়তো চূড়ান্তভাবে হস্তান্তর করা হবে’।
এসপি