ভূরিভোজ নিয়ে মশকরায় সংঘর্ষ, নারী-পুরুষরা গ্রামছাড়া
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের দিলালপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তুচ্ছ ঘটনার জেরে দুই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত হন। এ ঘটনার জেরে বাহেরনগর গ্রামে বাড়িঘর ভাঙচুর, কয়েক কোটি টাকার সম্পদ লুট হওয়ার পর শতাধিক পরিবারের নারী-পুরুষ এখন গ্রামছাড়া।
রোববার (৮ আগস্ট) দুপুরে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার দিলালপুর ইউনিয়নের বাহেরনগন গ্রামে সরেজমিন পরিদর্শনে এ বর্বরোচিত তাণ্ডবের চিত্র দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, গত ৭ জুন দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে মুজিবুর রহমান (৬০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। নিহত হওয়ার পরে হত্যা মামলার পরপরই প্রতিপক্ষের লোকজনের বাড়িঘরে চালানো হয় মধ্যযুগীয় কায়দায় হামলা ও লুটপাটের তাণ্ডব। এ তাণ্ডবে শতাধিক পরিবারের বাড়ি-ঘর ধ্বংসসহ প্রায় আড়াই কোটি টাকার সম্পদ লুট হয় এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় কোটি টাকার সম্পদ।
প্রকাশ্য দিবালোকে এ হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুরের তাণ্ডবের পাশাপাশি অগ্নিসংযোগসহ নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, গরু-ছাগল, শত শত মণ ধানচাল, পুকুর-খামারের মাছ ও মূল্যবান সহায়-সম্পদ লুটে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। গ্রামছাড়া হয় গ্রামের শতাধিক পরিবারের শিশুসহ নারী-পুরুষ।
বিজ্ঞাপন
এমন বর্বরোচিত ঘটনা এবং দাপটের কারণে এখনো ভুক্তভোগী পরিবারের নারী-পুরুষসহ শিশু-কিশোররা আশপাশের গ্রাম ও উপজেলায় আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। আসছে নতুন করে হামলা ও প্রাণনাশের হুমকিও।
সূত্রে জানা গেছে, আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে উপজেলার দিলালপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের দুই সম্ভাব্য প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া নভেল এবং সাবেক চেয়ারম্যান মিজবাহ উদ্দীন খান সাফী গরু জবাই করে তাদের কর্মী-সমর্থকদের ভুরিভোজ করান।
আলোচিত ওই ভুরিভোজ অনুষ্ঠানের পর ৭ জুন বিকেলে বাহের নগর গ্রামে এ নিয়ে গালগপ্পের এক পর্যায়ে কথা-কাটাকাটি থেকে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন দুই সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা। এ ঘটনায় সাবেক চেয়ারম্যান সাফী সমর্থক মুজিবুর রহমান (৬০) নামের এক ব্যক্তি নিহতসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ ব্যক্তি আহত হন।
এ সংঘর্ষের ঘটনার সময় কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে অবস্থানকারী বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া নভেলসহ জ্ঞাত-অজ্ঞাত দেড় শতাধিক লোককে আসামি করে বাজিতপুর থানায় মামলা করা হয় ৮ জুন। এরপর একই দিন আসামি ও তাদের স্বজনদের বাড়িঘরে চালানো হয় মধ্যযুগীয় হামলা-ভাঙচুর। চলে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা। এ তাণ্ডবের ভয়াবহতা এতটা ভয়ংকর ছিল যে পাকা দালানবাড়ি পর্যন্ত মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বাহেরনগর গ্রামের ভাঙচুর, হামলা ও লুটপাটের শিকার গৃহবধূ সুফিয়া আক্তার ও মেহেরা আক্তার ঢাকা পোস্টকে মধ্যযুগীয় তাণ্ডবের বর্বরোচিত ঘটনার বর্ণনা দেন। তাদের অভিযোগ, এ ঘটনায় সুনির্দিষ্টভাবে থানায় লিখিত এজাহার দেওয়া হলে আজও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এমনকি নতুন করে হামলা এবং প্রাণনাশের হুমকির কারণে তারা বাড়িতেও ফিরতে পারছেন না।
তারা বলেন, ওই তুচ্ছ ঘটনার জেরে সংঘটিত ওই সংঘর্ষে ১ জন নিহতসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ ব্যক্তি গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় জড়িত এবং ঘটনার সময় এলাকাতেই ছিলেন না, এমন নিরপরাধ মানুষকেও আসামি করা হয় মামলায়। ফলে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি তাদের নিজ বাড়িতে ফেরা ও নিরাপত্তার দাবি জানান তারা।
বাজিতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাজহারুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, দুই পক্ষের লোকজনের সংঘর্ষে এ হত্যাকাণ্ডের পর উত্তেজিত লোকজন এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে এ ঘটনায় কয়েক দিন আগে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন তিনি। ঘটনাটি তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান এই ওসি।
এসকে রাসেল/এনএ