পদ্মার ভাঙনের মুখে ৩৭৬ কোটি টাকার প্রকল্প
৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কংক্রিটের তৈরি সিসি ব্লক দিয়ে নির্মিত রাজবাড়ী জেলা শহর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদীর ডান তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্পের কাজ শেষ হবার আগেই একের পর এক পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে। গত দেড় মাসে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের চরসেলিমপুর, গোদার বাজার ও সোনাকান্দরের কমপক্ষে ৭টি পয়েন্টের ৩০০-৩৫০ মিটার এলাকার সিসি ব্লক ধসে গেছে। এতে হুমকির মধ্যে পড়ে গেছে রাজবাড়ী শহর রক্ষা বেড়িবাঁধসহ মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল ও শতাধিক বসতভিটা।
যে কারণে নদীতীর এলাকার মানুষসহ জেলা শহরের বাসিন্দারা এখন আতঙ্কিত। এ অবস্থায় সোমবার (৯ আগস্ট) দুপুরে ওই ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করতে রাজবাড়ী সফরে আসছেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম।
বিজ্ঞাপন
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের দাবি, ভাঙনকবলিত এলাকার অদূরে পদ্মা নদীর মাঝে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় থাকা বালু চরের কারণে নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে রাজবাড়ী শহর-সংলগ্ন অংশে। ফলে ওই চর অপসারণ করে নদীর গতিপথ মাঝ পদ্মায় নেওয়া না হলে এ ভাঙন থামবে না।
বিজ্ঞাপন
রাজবাড়ী পাউবো সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ী শহর রক্ষায় পদ্মা নদীর তীর স্থায়ীভাবে সংরক্ষণকাজ হয়েছে ৭ কিলোমিটার এলাকায়। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া শহর রক্ষা প্রকল্পের কাজ শেষ হয় চলতি বছরের ৩১ মে। তবে তাদের সিসি ব্লক ও বালুভর্তি বস্তা ডাম্পিং কাজ এখনো বাকি রয়েছে। এ বর্ষা মৌসুম গেলে ওই সিসি ব্লক ও বালুভর্তি বস্তা ডাম্পিং করার কথা। অথচ তার আগে প্রায় ৩০০ মিটার এলাকার সিসি ব্লক ধসে গেছে। এ কাজে ব্যয় হয়েছে ৩৭৬ কোটি টাকা। কাজটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল খুলনা শিপ ইয়ার্ড।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, পাউবো ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীনতার কারণেই বারবার তীর রক্ষা বাঁধে ধস হচ্ছে। এখন তাদের বসতভিটা, মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছে।
স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেন, ব্লকের নিচে ৩০ মিটার সুরক্ষাপ্রাচীর দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু তা দেওয়া হয়নি। তাদের এ বিষয়ে একাধিকবার বলা হয়েছে, ব্লকের নিচে সুরক্ষাপ্রাচীর না দিলে ব্লক টেকানো যাবে না, এমনকি স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে কাজে বাধা দেওয়া হলেও তারা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই কাজ চালিয়ে গেছে। সুরক্ষাপ্রাচীর না থাকায় স্রোতে ব্লকের নিচের বালু সরে যাচ্ছে। এতে ব্লক ধসে যাচ্ছে। ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তারা।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, পুরো এই কাজের তদারকির সাথে তিনি ছিলেন। কাজে গাফিলতি অথবা ফাঁকিবাজির কিছু হয়নি।
তিনি আরও বলেন, পদ্মা নদীর এ অংশে নদী চওরা প্রায় ২ হাজার ২০০ মিটার। এর মধ্যে ১ হাজার ২০০ মিটার চওরা স্থানে রয়েছে ৫ কিলোমিটার লম্বা চর। গত কয়েক বছরে পলিমাটি ও বালু জমে ওই চর আরও বেশি উঁচু এবং মজবুত হয়েছে। নদীর মূল গভীরতার ৫০০ মিটার স্থান চলে এসেছে রাজবাড়ী শহর-সংলগ্ন গোদার বাজার প্রান্তে। এর ফলে নদী ক্রমশ তার গতিপথ পরিবর্তন করে শহরমুখী হচ্ছে। ফলে ওই চর অপসারণ করে নদীর গতিপথ মাঝ পদ্মায় নেওয়া না হলে এ ভাঙন থামবে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নদীর মাঝে কমপক্ষে ৬০০ মিটার চওরা করে খনন করতে বিআইডব্লিউটিএ এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন। যত দ্রুত এই উদ্যোগ নেওয়া হবে, তত দ্রুত রক্ষা পাবে নদীতীরের ভাঙন।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আহাদ বলেন, বর্ষা মৌসুমে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় এই ভাঙন শুরু হয়েছে। তবে ভাঙন রোধে বালুর বস্তা ও জিও টিউব ফেলা হচ্ছে। এই নকশা ৫-৬ বছর আগের। এখন নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় এই নকশা দিয়ে নদী ভাঙন রোধ করা যাবে না। তাই এখন নকশার পরিবর্তন করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করতে হবে।
সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী জানিয়েছেন, নদীভাঙন শুরু হলে তিনি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ছুটে গেছেন। এই ভাঙন ঠেকানো না গেলে বিলীন হয়ে যাবে রাজবাড়ী শহর রক্ষা বেড়িবাঁধ। তার আতঙ্কিত হওয়ার বিষয়টি সরজমিনে দেখতে এবং সঠিক পদক্ষেপ নিতে আজ সোমবার দুপুরে ওই ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করতে রাজবাড়ী সফরে আসছেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী।
তিনি আশা করছেন, জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে।
মীর সামসুজ্জামান/এনএ