রাজশাহী নগর পুলিশের (আরএমপি) বোসপাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন এক গৃহবধূ (১৮)। অভিযোগের তির ফাঁড়িতে দায়িত্বরত এএসআই মো. শামীমের দিকে।

৮ আগস্ট ‍দুপুরের দিকের এই ঘটনায় এএসআই শামীমকে সোমবার (৯ আগস্ট) ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহারের আদেশ দেন নগর পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক। পরে তাকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এর আগে রোববার বিকেলে বোয়ালিয়া মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন নির্যাতনের শিকার ওই ভুক্তবোগী। মামলা হিসেবে না নিলেও ওই অভিযোগ তদন্ত করছে পুলিশ।

বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারন চন্দ্র বর্মন এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এএসআই শামীমকে ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। সেটি তদন্ত করে আইনত ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।

এদিকে নির্যাতিতার পরিবার জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই স্বামীর নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন ওই গৃহবধূ। গত ৪ আগস্ট আরেক দফা নির্যাতন চালান স্বামী।

প্রাণে বাঁচতে জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ এ ফোন দেন। পরে তাকে উদ্ধার করেন বোসপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মো. শামীম। স্বামীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি ওই গৃহবধূকে পুলিশ ফাঁড়িতে দেখা করতে বলেন।

এএসআই শামীমের কথামত রোববার দুপুরের দিকে মাকে সাথে নিয়ে ফাঁড়িতে গিয়েছিলেন ওই গৃহবধূ। ওই সময় বাইরে একজন সেন্ট্রি ছাড়া ফাঁড়িতে কেউ ছিলেননা।

তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনীয় কথা বলার নাম করে ওই সময় গৃহবধূর মাকে বের করে দেন। পরে জোর করে তার ওপর যৌন নিপীড়ন চালান এএসআই। নির্যাতিতা কাঁদতে কাঁদতে বাইরে এসে ঘটনাটি মাকে জানান।

পরে ওই ঘটনা জানানো হয় তার বাবাকে। ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে পুলিশের নিপীড়নের কথাও জানান গৃহবধূর বাবা। পরে তাকে বোয়ালিয়া মডেল থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে ওই গৃহবধূর মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।

সোমবার নগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকের সঙ্গে দেখা করে ভুক্তভোগী গৃহবধূর পরিবার ঘটনাটি জানান। ঘটনা শুনে কমিশনার তাদের বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসির কাছে পাঠান। এর পরই অভিযুক্ত এএসআই শামীমকে প্রত্যাহারের আদেশ দেন কমিশনার।

এদিকে মামলা দায়েরের পরও বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। ঘটনার রাতেই নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে সালিশে দোষ স্বীকার না করলেও ওই গৃহবধূর বাবার হাত ধরে ক্ষমা চান এএসআই শামীম। কিন্তু সমঝোতায় রাজি হননি গৃহবধূর বাবা।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরমান আলী বলেন, তার কার্যালয়ে এএসআই শামীম মেয়েটির বাবার হাতে ধরে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, তিনি তেমন কোনো অন্যায় করেননি। তারপরও তিনি ক্ষমা চাইছেন। অভিযোগ বিষয়ে জানতে কয়েক দফা চেষ্টা করেও এএসআই শামীমের মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায়নি।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএসআর