৫৩ টন চিনি উধাও, ডিজিএমসহ তিনজনের নামে দুদকের মামলা
কুষ্টিয়া চিনিকলের গুদাম থেকে প্রায় ৫৩ টন চিনি উধাওয়ের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে উপ-ব্যবস্থাপকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কুষ্টিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অফিস। দুদক সমন্বিত কুষ্টিয়ার অফিসের উপসহকারী পরিচালক নীল কমল পাল বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
আসামিরা হলেন কুষ্টিয়া সুগার মিলস লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপক (ভান্ডার) মো. আল আমীন, গুদামরক্ষক মো. ফরিদুল হক এবং শ্রমিক সরদার মো. বশির উদ্দিন।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) দুপুরে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শেখ আবু তাহেরের আদালতে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক কুষ্টিয়ার কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আল মুজাহিদ মিঠু।
অ্যাডভোকেট আল মুজাহিদ মিঠু বলেন, এ মামলায় তিনজনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়। ৬ জুনের নামবিহীন সাধারণ ডায়েরির সূত্র ধরে দুদক প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা এবং জড়িত সন্দেহে সংশ্লিষ্ট বিভাগে দায়িত্বরত তিনজনকে শনাক্ত করে।
এজাহার সূত্র ও কুষ্টিয়া সুগার মিল সূত্রে জানা গেছে, ২ জুন মিলের স্টেটমেন্ট দেখার জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ৩ জুন প্রতিবেদন জমা দেয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে।
বিজ্ঞাপন
স্টেটমেন্টে ১২১ টন চিনি থাকার কথা থাকলেও প্রায় ৫৩ টন ঘাটতি দেখা যায়। এতে দায়িত্বরত স্টোরকিপার ফরিদুল হককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। হদিস না পাওয়া চিনির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩ লাখ ২০ হাজার টাকা।
৬ জুন কুষ্টিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন চিনিকলের সহব্যবস্থাপক (সংস্থাপন) হায়দার আলী। নামবিহীন ওই ডায়েরির সূত্র ধরে দুদক প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা এবং জড়িত সন্দেহে সংশ্লিষ্ট বিভাগে দায়িত্বরত তিনজনকে শনাক্তের পর মামলা করে।
মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকিবুর রহমান খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্টোরে চিনির হিসাব করার জন্য প্রথমে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ৩ জুন প্রতিবেদন জমা দিলে দেখা যায়, প্রায় ৫৩ টন চিনির ঘাটতি আছে। এতে স্টোরকিপার ফরিদুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
প্রাথমিকভাবে তার অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে। চিনি উধাও হওয়ার ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় জিডি করা হয়েছিল। চিনি উধাও হওয়ার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে উপ-ব্যবস্থাপকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক বলে জানা তিনি।
স্থানীয়রা ও শ্রমিক নেতারা বলেন, বাইরে বিক্রির সময় ওই সব ট্রাকে চিনি পাচার করে আসছে চিনিকলেরই একটি চক্র। এ কারণে দিনের বেলার পাশাপাশি রাতেও চিনির ট্রাক বের হতো গুদাম থেকে। এর আগে গোডাউন ধসেও কিছু চিনি নষ্ট হয়। সে সময়ও চিনি পাচার হতে পারে।
মিলের সিবিএর সাধারণ সম্পাদক আনিস মাহমুদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র এ কাজ করে আসছিল। মিল বন্ধ না হলে হয়তো বিষয়টা ধরা পড়ত না। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা ন্যক্কারজনক ঘটনা।
সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হোসেন জানান, ১০-১২ বছর ধরে এমন কাজ চলে আসছিল বলে তার ধারণা। এক দিনে এত চিনি পাচার হয়নি। এখন বিষয়টি সামনে এসেছে। কর্মকর্তাদের কেউ কেউ এর সঙ্গে জড়িত।
মিলের একাধিক সূত্র জানায়, মিল থেকে চিনি উধাওয়ের ঘটনা নতুন কিছু না। মিলের অসাধু কর্মকর্তারা এসব চিনি বাইরে বিক্রি করে দিয়ে নানা অজুহাত দিয়ে থাকেন। কুষ্টিয়া সুগার মিলের চোরদের একটি সিন্ডিকেট এ ধরনের চুরির সঙ্গে জড়িত।
উল্লেখ্য, গত ১৯ বছরে কুষ্টিয়া চিনিকলে লোকসান হয়েছে ৪২০ কোটি টাকা। ফলে শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দৌরাত্ম্য, চরম দুর্নীতি, ব্যবস্থাপনায় ক্রটি ও ক্রমাগত লোকসানে ২০২০-২১ অর্থবছর মিলে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
গত মৌসুমে ২ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া চিনিকলের আখমাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঐতিহ্যবাহী এ মিলটি বন্ধ থাকায় প্রায় এক হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কর্ম হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
রাজু আহমেদ/এমএসআর