মোবাইল চুরির অভিযোগে সজীব (১১) নামের এক শিশুর মাথার চুল কেটে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় একটি কলেজের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নির্যাতনকারী দোকান মালিককে আটক করেছে পুলিশ।

শনিবার (১৪ আগস্ট) বিকেলে বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়ন বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

সজীব গৈলা ইউনিয়নের উত্তর শিহিপাশা গ্রামের লাল মিয়া সরদারের ছেলে। তার বাবা পেশায় একজন ভ্যানচালক।

স্থানীয়রা জানান, গৈলা বাজারের অলি টেলিকম থেকে মোবাইল চুরির অভিযোগ এনে স্থানীয় শাহীন খানের ছেলে তাওহীদ খানের নেতৃত্বে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ মোল্লা, এনামুলসহ চার-পাঁচজন মিলে শনিবার বিকেলে বাজারে ডেকে এনে সজীবকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে হাফিজুল দাড়িয়ার দোকান থেকে কাঁচি এনে তার মাথার চুল কেটে চুরির শাস্তি দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে শিশুর মা সানু বেগম বলেন, দুপুরে সজীব বাড়ি আসে। একটু পরে গৈলা বাজারের অলি টেলিকমের মালিক অলি বেপারী তাদের বাড়ি এসে সজীবকে বাজারে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর বিকেলে তার ছেলে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি এসে জানায় যে ওকে মারধর করে মাথার চুল কেটে দিয়েছে।

সজীবের বাবা লাল মিয়া সরদার বলেন, এখন আমার ছেলেকে মারছে। আমি কথা বললে আমাকেও মারতে পারে। আমরা গরিব মানুষ। আমরা কারও বিরুদ্ধে কথা বলতে চাই না।

অলি টেলিকমের মালিক অলি বেপারী বলেন, সজীব আমার দোকান থেকে একটি মোবাইল চুরি করে নিয়ে যায়। দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সজীবকে ফোন নেয়ার ঘটনায় তার বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে সে চুরির কথা স্বীকার করে। একপর্যায়ে চুরি যাওয়া মোবাইলটি সজীব ফেরত দেয়। তার মধ্যে সিম না থাকায় তাকে সিম দুটি ফেরত দিতে বললে সে সিম ফেলে দেওয়ার কথা জানায়।

পরে তাকে বাড়ি থেকে ডেকে আনলে দেখায় বাজারের ময়লা ফেলার স্থানে ফেলেছে। সেখান থেকে সিম দুটি উদ্ধার করি। এরপর তাকে নিয়ে মসজিদে নামাজ পড়ে মিলাদের তবারক দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিই। পরে শুনেছি যে বাজারে বসে তার চুল কেটে দিয়েছে লোকজন।

গৈলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শফিকুল হোসেন টিটু জানান, লোকমুখে ঘটনা শুনে তিনি গৈলা বাজারে উপস্থিত হয়ে শিশুকে মারধর ও চুল কাটার কথা জানতে পারেন। অমানবিক এ ঘটনার তিনি আইনগত বিচার দাবি করেন এবং জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান।

আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ছরোয়ার বলেন, খবর পেয়ে নির্যাতনকারী অভিযুক্ত দোকানমালিক অলিকে আটক করে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি। এ ঘটনায় মামলা করবেন শিশুর মা।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এনএ