চাকরির পেছনে না ছুটে গ্রামে ড্রাগন ফল চাষ করছেন সাদ্দাম
সজিব হোসেন সাদ্দাম। বাড়ি মাদারীপুর সদরে। পড়ালেখা করেছেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্রাবস্থায় ঘুরেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ। দেশ ভ্রমণ করতে গিয়ে উদ্বুদ্ধ হন ড্রাগন চাষে। ড্রাগন ফল এবং চারা বিক্রি করে ইতোমধ্যে খরচ উঠিয়ে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন।
জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের চরনাচনা গ্রামের বাসিন্দা সাদ্দাম। ছাত্র অবস্থায় থাকাকালীন বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করা ছিল তার একটি শখ। একে একে ভ্রমণ করেছেন থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভুটান, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ। বিদেশের মাটিতে ড্রাগন ফলের বাগান দেখে দেশের মাটিতেও এ ফল চাষের স্বপ্ন দেখেন তিনি। পড়াশুনা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তা করেন। ফিরে আসেন নিজ গ্রামে। বাড়ির সঙ্গে ছয় একর জমিতে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন।
বিজ্ঞাপন
ইউটিউব, ইন্টারনেট ও মাদারীপুর কৃষি অফিস থেকে প্রযুক্তিগত কলাকৌশল আয়ত্ত করেন তিনি। দেশ-বিদেশ থেকে উন্নত জাতের ড্রাগন ফলের চারা সংগ্রহ করে সাড়ে ৪ হাজার ড্রাগন ফলের চারা রোপণ করেন। এতে তার ব্যয় হয় প্রায় ২০ লাখ টাকা। কিন্তু চারায় ফল আসার আগেই জুলাই মাসের দিকে আকস্মিক বন্যায় বিনিষ্ট হয়ে যায় তার বাগান। এতে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন তিনি। তবে হাল ছাড়েননি সাদ্দাম।
বিজ্ঞাপন
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আবারো ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে শুরু করেন ড্রাগন চাষ। নানা প্রতিকূলতা পার হয়ে এবার সফলতার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন এ যুবক। গাছে আসতে শুরু করেছে ফুল ও ফল। প্রতিটি খুঁটিতে লাগানো রয়েছে চারটি করে গাছ। একটি খুঁটি থেকে প্রতি মাসে সংগ্রহ করছেন ৪-৫ কেজি ফল। প্রতি কেজি ফল ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি করছেন। বাজারে ব্যাপক চাহিদা এবং ভালো মূল্য পাওয়ায় তার মুখে হাসি ফুটেছে।
প্রতি বছর মার্চ থেকে মে মাসে ফুল আসে আর শেষ হয় নভেম্বর মাসে। ফুল আসার ৩০-৪০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। এক একটি ফলের ওজন ২৫০ গ্রাম থেকে এক কেজিরও বেশি হয়ে থাকে। একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে ১০০-১৩০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। প্রতি মৌসুমে তার ৭-৮ লাখ টাকা আয় হয়। খরচ উঠিয়ে সাদ্দাম লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন।
সাদ্দামের বাবা ও বড় ভাইসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্য সময় দিচ্ছেন ড্রাগন বাগানে। সাতজন শ্রমিক তার বাগানে কাজ করছে। বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ড্রাগন বাগানের কোনো ক্ষতি না হলে একই গাছ থেকে কমপক্ষে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী সাদ্দাম হোসেন।
সাদ্দামের ড্রাগন বাগান দেখার জন্য প্রতিদিন শত শত মানুষ জেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলার লোকজন আসছেন এবং ড্রাগনের চারা নিয়ে বাগান করছেন। সাদ্দাম হোসেন ড্রাগন বাগানের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফলের বাগান করেছেন। আগামীতে আরও বড়ো পরিসরে ড্রাগন ফলের বাগান করার পরিকল্পনা রয়েছে তার।
সজিব হোসেন সাদ্দাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাদারীপুর জেলায় এত বড় পরিসরে তিনিই প্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাগান করেছেন। বাজারে ভালো দাম ও চাহিদা রয়েছে এ ফলের। অনেকেই আসছেন পরামর্শ নিতে আবার অনেকই চারা নিয়ে যাচ্ছেন চাষ করার জন্য। ড্রাগন চাষে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। বেকার যুবকরা যদি এমন উদ্যোগী হয় তাহলে তারা নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি দেশের বেকারত্ব কমবে।
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাদ্দাম হোসেনের সফলতা দেখে ড্রাগন ফলের চাষ করতে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে অন্যান্য কৃষকের মাঝে। বিদেশি এ ফল দেশের মাটিতে চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এ ফল চোখকে সুস্থ রাখে, শরীরের চর্বি কমায়, রক্তের কোলেস্টেরল কমায়, উচ্চ রক্তচাপ কমানোসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় এ ফল চাষে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
এসপি