মহাজনের দাদনে আটকে আছেন শতবর্ষী সবজি চাষিরা
পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর ও নেছারাবাদ উপজেলার কিছু এলাকা সারা বছরই জোয়ার-ভাটার কারণে জলাবদ্ধ থাকে। এ কারণে এ অঞ্চলে শত বছর ধরে ভাসমান পদ্ধতিতে বিভিন্ন জাতের সবজি ও চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। তবে সম্ভাবনাময় এ কৃষিক্ষেত্রে কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় হতাশ চাষিরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভৌগোলিকভাবে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার দেউলবাড়ী-দোবড়া, কলারদোয়ানিয়া ও মালিখালী এবং নেছারাবাদ উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা সারা বছর ৫-৮ ফুট পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এ কারণে এ অঞ্চলে ভাসমান পদ্ধতিতে উৎপাদন হচ্ছে বিভিন্ন জাতের সবজি ও চারা। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান হয়েছে বিলাঞ্চলের কয়েক হাজার চাষির। তবে ফসল চাষাবাদের ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে সহজে ঋণ না পাওয়ায় চাষিরা দারস্থ হন স্থানীয় মহাজনদের কাছে। তাদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ফসল আবাদ করলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লাভের মুখ দেখতে পারেন না। দাদন ব্যবসার জালে জড়িয়ে সবর্স্ব হারান চাষিরা।
বিজ্ঞাপন
চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, আমার তেমন নিজস্ব জমি নেই। বেশির ভাগই বর্গা নেওয়া জমি। এই জমিতেই গড়ে তোলা হয়েছে ভাসমান সবজির খেত। ভাসমান অবস্থায় তৈরি হয় বেড বা ধাপ। আমার নিজের চাষ করার মতো ১৫-১৬টি ধাপ আছে। শিম, পেঁপেঁ, টমেটো, মরিচ ও লাউসহ বিভিন্ন সবজির চাষ হয় এখানে। ৬০ হাত একটি বেড কিনতে ৭-১০ হাজার টাকা খরচ হয়। করোনার কারণে এ বছর দাম ভালো পাচ্ছি না।
বিজ্ঞাপন
চাষি মো. রিপন মোল্লা বলেন, এই এলাকার প্রায় ৮০-৯০ ভাগ মানুষ ভাসমান সবজি চাষের সঙ্গে জড়িত। বৈশাখ থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত এই ভাসমান সবজির চাষ চলে। পানি শুকিয়ে যাওয়ার পরে অন্যান্য ফসল চাষ হয়। গত বছর চারা প্রতি ৮-৯ টাকা ছিল কিন্তু করোনার কারণে এ বছর কেউ দুই টাকায়ও কিনতে চায় না।
পাইকারী ব্যবসায়ী সালেক ব্যাপারী বলেন, আমরা বৈঠাকাটা থেকে সবজি পাইকারি ২০-২৫ টাকায় কিনে স্বরূপকাঠীসহ বিভিন্ন এলাকায় ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি করি। সড়ক পথ ভালো হলে বড় ব্যাপারীও আসতে পারত। ব্যবসা বাণিজ্য ভালো হতো।
পাইকারী ব্যবসায়ী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ২০ বছর ধরে এই সবজি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এই বৈঠাকাটা বাজার থেকে সবজি কিনে আমি মঠবাড়িয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করি। ঢাকা, পাথরঘাটা, মহিপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় এই মালামাল যায়। করোনার কারণে বর্তমানে অনেক অসুবিধায় আছি। সড়ক পথ যদি উন্নত হতো তাহলে আরেকটু ভালো ব্যবসা করতে পারতাম।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রিসোর্স ইন্ট্রিগ্রেশন সেন্টারের (রিক) কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিচালক আবুল হাসিব খান জানান, ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের আওতায় মূলত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের কারিগরি সহায়তাসহ মাসিক, ষন্মাষিক ও বাৎসরিক কিস্তিতে ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। প্রান্তিক, ভূমিহীন, বর্গাচাষি, কৃষকদের ব্যাংক ঋণ না দেওয়ায় আমরা তাদের ১৯ শতাংশ হারে কোনো জামানত বা শর্ত ছাড়া ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করে থাকি। আমাদের এই ঋণ নিয়ে তারা অনেক ভালো আছে। আমরা ঋণ না দিলে তাদের এই ঋণটা নিতে হয় মহাজনদের কাছ চড়া সুদে। আমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ নেই না যা স্থানীয় মহজনরা নেয়।
কৃষি ঋণ নিতে হলে জামানতের দরকার আছে। যদি জামানত দিয়ে কেউ ঋণের আবেদন করে থাকেন তাহলে আমাদের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কৃষি ঋণের যে আলাদা শাখা রয়েছে সেখান থেকে তাদের ঋণের ব্যবস্থা করে দিতে পারি।
এসপি