টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গার বাসিন্দা সুমন তালুকদার সৌদি প্রবাসী। ছুটিতে বাড়িতে এসে তিনি পাসপোর্ট রি-ইস্যু করতে দেড় মাস আগে ১১ হাজার টাকার বিনিময়ে দালালের মাধ্যমে টাঙ্গাইল আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আবেদন জমা দিয়েছেন। কিন্তু এখনও তিনি পাসপোর্ট হাতে পাননি। দালালও তার ফোন ধরছে না। ফলে সৌদি যাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন তিনি। 

এদিকে সুমন তালুকদারকে চলতি বছরের ৬ সেপ্টেম্বর সৌদিতে গিয়ে কাজে যোগদান করতে হবে। সুমনের মত আরও অনেকেই দালালের খপ্পরে পড়ে মাসের পর মাস পাসপোর্ট না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

তবে টাঙ্গাইল আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা জানান, ভোগান্তি ছাড়াই মানুষজন সহজেই নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্ট গ্রহণ করতে পারছেন। অনেকেই আবেদন করে পরে আর পাসপোর্ট গ্রহণ করছেন না। ফলে অফিসেই শত শত পাসপোর্ট পড়ে আছে।

টাঙ্গাইল আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় আবেদনের প্রেক্ষিতে তৈরি হওয়া নতুন পাসপোর্ট, রি-ইস্যুকৃত পাসপোর্টে বিভিন্ন ত্রুটি থাকার কারণে ১ হাজার ৪০০ পাসপোর্ট অফিসে আটকা পড়ে আছে। এর মধ্যে অনেকেই আবার পুরাতন পাসপোর্ট রেখে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন। ফলে তারা নতুন পাসপোর্ট পাচ্ছেন না। নতুন পাসপোর্টের আবেদন বাতিল করে তাদের পুরাতন পাসপোর্ট রি-ইস্যুর জন্য আবেদন করতে হবে। 

এছাড়া গত ৪-৫ বছর ধরে প্রায় ২৫ হাজার পাসপোর্ট অফিসেই পড়ে আছে। এর মধ্যে প্রায় ১৩ হাজার পাসপোর্টধারী মারা গেছেন। অনেকের হয়ত আর পাসপোর্ট লাগবে না। অনেক পাসপোর্টের মেয়াদ শেষের দিকে। মেয়াদ উত্তীর্ণ ও পড়ে থাকা পাসপোর্টের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিতভাবে জানিয়েছেন পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা। 

এদিকে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের দালালদের দৌড়াত্ম কমাতে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও দালালদের তালিকা তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিতভাবে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, টাঙ্গাইল আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করতে এসে দালালের খপ্পরে পড়ছেন ভুক্তভোগীরা। পাসপোর্ট অফিসে দায়িত্বরত নিরাপত্তা প্রহরী (আনসার) থেকে শুরু করে পাসপোর্ট অফিসের আশপাশের ফটোকপির দোকানদার ও স্থানীয় দালালরা বিপুল টাকার বিনিময়ে পাসপোর্টের কাজ করিয়ে দেন। এতে সাধারণত কেউ যদি দালাল ছাড়া পাসপোর্টের জন্য আবেদন জমা দিতে যান তাতে বিভিন্ন ভুল ধরিয়ে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে ভুক্তভোগীরা টাকার বিনিময়ে দালালদের মাধ্যমে সেই আবেদন পুনরায় অফিসে জমা দিতে পারেন।

প্রবাসী সুমন তালুকদার বলেন, ছুটি নিয়ে দেশে এসে পাসপোর্ট রি-ইস্যু করতে দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট জমা দিয়েছি। কিন্তু দেড় মাস পাড় হলেও পাসপোর্ট পাচ্ছি না। এদিকে ছুটির মেয়াদ শেষের দিকে। পাসপোর্ট হাতে না পেলে সৌদিতে যেতে পারব না। ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। এখানে দালাল ছাড়া কোনো কাজই হয় না। কয়েকদিন যাবৎ ঘুরাঘুরি করছি কিন্তু পাসপোর্ট পাচ্ছি না।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার আনুহলার গয়রাগাছা গ্রামের এরশাদ জানান, তার বাবার ভোটার আইডি কার্ডে রবি উল্লাহ রয়েছে। কিন্তু আমার আইডি কার্ডে রবিউল্লাহ লেখা। এখানে শুধু নামের মাঝখানে স্পেস নেই। এতে সমস্যা রয়েছে। এছাড়া বানান ও অন্য কোনো সমস্যা নেই। তাতেই পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ না করে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

আরেক পাসপোর্টধারী মো. আবু বক্কর তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালে। নতুন করে পাসপোর্ট রি-ইস্যু করতে আবেদন করেছিলেনঅ তার ভোটার আইডিতে মো. আবু বক্কর লেখা এবং পুরাতন পাসপোর্টে মোহাম্মদ আবু বক্কর লেখা থাকায় তার পাসপোর্ট রি-ইস্যু হচ্ছে না। পাসপোর্ট অফিস তাকে ভোটার আইডি সংশোধন করে পুনরায় পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যে আবু বক্করের ভিসা চলে এসেছে। এখন শুধু পাসপোর্টের অপেক্ষা।

ভুক্তভোগী আবু বক্কর বলেন, ২০১৪ সালে পাসপোর্ট করেছিলাম সেখানে মোহাম্মদ আবু বক্কর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ভোটার আইডিতে শুধু মোঃ লেখা রয়েছে। এতে পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ায় রি-ইস্যু করতে দেওয়া হলে আবেদন ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভোটার আইডি সংশোধন করতে গেলে অনেক সময় লাগবে। এতদিনে আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। 

টাঙ্গাইল আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক বিপুল কুমার গোস্বামী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৪-৫ বছরে আবেদনকারীদের প্রায় ২৫ হাজার পাসপোর্ট পড়ে আছে। এছাড়া ২ হাজার ৪০০ পাসপোর্ট বিভিন্ন সমস্যার কারণে আটকা পড়ে আছে। বর্তমানে পাসপোর্টের জন্য আবেদনকারীদের নামের বানান ভোটার আইডির সঙ্গে মিল থাকে না। এতে পাসপোর্টের সঙ্গে ভোটার আইডি লিঙ্ক যুক্ত থাকায় জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে।

এক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী আবেদনকারীদের আগে ভোটার আইডি সংশোধন করতে হবে। পরে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে। সেটা হোক নতুন পাসপোর্ট অথবা রি-ইস্যু। এতে মানুষজন দালালের খপ্পরে পড়েন। পরবর্তীতে তারা ভুক্তভোগীরা আর দালালের হদিস পান না। সম্প্রতি দালালদের তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়েছে। এছাড়াও পাসপোর্ট অফিসে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।

অভিজিৎ ঘোষ/আরএআর