রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধের ডান তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্পের কাজ শেষ না হতেই একের পর এক পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে কংক্রিটের তৈরি সিসি ব্লক। গত কয়েকদিনে বিলীন হয়ে গেছে নদী তীর রক্ষায় ব্যবহৃত কংক্রিটের তৈরি হাজার হাজার সিসি ব্লকসহ প্রায় ২শ থেকে ৩শ মিটার এলাকা। এতে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধসহ বসতভিটা ও মসজিদ। একই সঙ্গে আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী।

মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) বিকেল সাড়ে৫ টার দিকে রাজবাড়ী শহর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে মিজানপুর ইউনিয়নের সোনাকান্দর মৌলবি ঘাট এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। এতে প্রায় ৪০ মিটার কংক্রিটের তৈরি সিসি ব্লক ধসে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজবাড়ীর গোদার বাজার ঘাট থেকে ৩শ-৪শ গজ সামনে সোনাকান্দর মৌলভী ঘাটের কাছে প্রায় ৪০ মিটার কংক্রিটের তৈরি সিসি ব্লক নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শহর রক্ষা বাঁধের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ চলাকালে এই ভাঙন শুরু হয়। এতে ওই এলাকার বসতভিটা এবং রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। এ সময় জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে সিসি ব্লক ও বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলতে গেছে। 

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ী শহর রক্ষায় পদ্মা নদীর তীরে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ কাজ হয়েছে সাত কিলোমিটার এলাকায়। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া শহর রক্ষা প্রকল্পের কাজ শেষ হয় চলতি বছরের ৩১ মে। তবে তাদের সিসি ব্লক ও বালু ভর্তি বস্তা ডাম্পিং কাজ এখনো বাকি রয়েছে। এ বর্ষা মৌসুম গেলে ওই সিসি ব্লক ও বালু ভর্তি বস্তা ডাম্পিং করার কথা। অথচ তার আগে প্রায় ৩ শত মিটার এলাকার সিসি ব্লক ধসে গেছে। এ কাজে ব্যয় হয়েছে ৩৭৬ কোটি টাকা। কাজটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল খুলনা শিপ ইয়ার্ড।

স্থানীয় বাসিন্দা আজিজ মন্ডল অভিযোগ করে বলেন, ব্লকের নিচে ৩০ মিটার গাইড ওয়াল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা দেওয়া হয়নি। স্থানীয়ভাবে একাধিকবার বলা হয়েছে। কাজে বাধাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। নিচে গাইড ওয়াল না থাকায় স্রোতে ব্লকের নিচের বালু ধুয়ে যাচ্ছে। এতে ব্লক ধসে যাচ্ছে। যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে কাজ করা হলে এই ভাঙন দেখতে হতো না। যেখানে ভাঙে, সেখানে বালুর বস্তা ফেলা হয়। কিন্তু যেখানে ভাঙে না, সেখানে বালুর বস্তা ফেলা হয় না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আহাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পদ্মার পানি এখন বিপৎসীমার ওপরে। এছাড়াও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীতে তীব্র স্রোত। স্রোতের চাপে সিসি ব্লকের নিচ থেকে বালু সরে যাচ্ছে। ব্লকের নিচের বালু আলগা হয়ে যাওয়ায় তা ধসে পড়ছে। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছি। 

এর আগে গত ১৬ জুলাই  গোদার বাজার চরসিলিমপুর এলাকায় ২০ মিটার ও গত ২৭ জুলাই গোদারবাজার এনজিএল ইট ভাটার পাশে প্রায় ২০০ মিটার এলাকা নদী ভাঙনের কবলে পড়ে। নদীর তীর এলাকার প্রকল্পের স্থানের কাজ শেষের দুই মাস না যেতেই তিনটি পয়েন্টে ব্লক ধসে যায়। পরে সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

মীর সামসুজ্জামান/আরএআর