প্রায় এক মাস ধরে অসুস্থ উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এখনো তিনি হাসপাতালে ভর্তি হননি। 

চিকিৎসা নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকা ‘বিহাস’-এর নিজ বাসা ‘উজান’-এ। তার সঙ্গে রয়েছেন ছেলে ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইমতিয়াজ হাসান।

তিনি মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) রাতে গণমাধ্যমকে জানান, বার্ধক্যজনিত সমস্যা ছাড়াও আগে থেকেই তার হার্টে সমস্যা এবং ডায়াবেটিস রয়েছে। বর্তমানে তিনি বেশি ভুগছেন হাইপোন্যাট্রিমিয়ায়। এটা হচ্ছে শরীরে লবণের ঘাটতি। 

তিনি একেবারে নিস্তেজ হয়ে গেছেন। চিন্তাশক্তিও কমে গেছে। খুব বেশি কথা বলতে পারছেন না। কাউকে সেভাবে চিনছেনও না। তার বাবা মানুষের সান্নিধ্য পছন্দ করেন। কিন্তু করোনার কারণে সেই সুযোগ তিনি পাচ্ছেন না। 

বাবার চিকিৎসার বিষয়ে ইমতিয়াজ হাসান বলেন, করোনার কারণে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো বাসায় রেখে চিকিৎসা চলছে। লবণের ঘাটতি পূরণের জন্য তাকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে, লবণের ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাসাতেই তার ইসিজি করানো হয়েছে। 

তিনি বলেন, বাবা এক বার পড়ে গিয়েছিলেন। এক্সরে করে সেখানে হালকা ফ্যাকচার ধরা পড়েছে। এ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া কঠিন। তাই চিকিৎসা বাড়িতেই চলছে। বাবার সুস্থতায় সবার দোয়া চেয়েছেন ইমতিয়াজ হাসান।

এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় ফেসবুক স্ট্যাটাসে বাবা হাসান আজিজুল হকের অসুস্থতার কথা জানান ইমতিয়াজ হাসান। দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘আম্মা মারা যাওয়ার পর থেকেই সবার মাঝে থেকেও আব্বা বড় একা। তাকে আরও একা করে দিয়েছে কোভিড-১৯ অতিমারি। ছেলেবেলা থেকে দেখে আসছি, বাঁচার জন্য আব্বার ভাত-তরকারির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সঙ্গ-হাসি-গল্প-গান দরকার হয়। সঙ্গত কারণেই এ সময় সেটা পাচ্ছেন না।

কোভিডের মরণ কামড় এড়িয়ে অন্যান্য বার্ধক্যজনিত সমস্যা সামাল দেওয়া কতটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা ভুক্তভোগীরা জানেন। আব্বা বয়সের ভারে শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন অনেকটা, মনটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছে একটু, আড়ালেও কি চলে যাচ্ছেন ধীরে ধীরে?’

ইমতিয়াজ হাসান আরও লিখেছেন, ‘গত এক মাস তিনি ভীষণ অসুস্থ, ছোট একটি শিশুর মতো আমাদের উনার পরিচর্যা করতে হয়। পরিবারের মানুষ আর গুটি কয়েক শুভানুধ্যায়ী ছাড়া কেউ সে কথা জানেন না। অনেকেই হয়তো মন চাইলেও তার খবর নিতে পারেননি বা যোগাযোগ করতে পারছেন না। সে জন্যই এটুকু লেখা। আপনাদের দোয়ায়, প্রার্থনায় তাকে রাখবেন।’

অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজশাহীতে কাটিয়েছেন। ১৯৭৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত একনাগাড়ে ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন তিনি।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এসপি