সুস্থ আছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। বুধবার রাত ১১টার দিকে আনসার সদস্যদের গুলিতে তিনি আহত হন বলে শহরে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাত ৩টার দিকে মেয়র ঢাকা পোস্টকে জানান, তিনি আহত হননি। 

মেয়র বলেন, ‘ছররা গুলি করা হয়েছিল। আমার গায়ে লেগেছিল, ব্যথা পেয়েছি। আমার গায়ে জ্যাকেট ছিল। সেসময় সঙ্গের লোকেরা আমাকে সুরক্ষা দিয়েছেন। তাদের গুলি লেগেছে। অনেকেই আহত হয়ে থাকতে পারেন। তবে  কতজন, জানি না।’ 

মেয়র বলেন, সেসময় আমি মাথা ঠান্ডা রেখেছি। মন বিষণ্ণ হওয়ায় বাসায় চলে এসেছি। এ সুযোগে শহরে খবর ছড়িয়েছে যে আমি গুলিবিদ্ধ হয়েছি। 

বুধবার (১৮ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে ব্যানার সরানোকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার এনামুল হক। 

এসময় মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ গুলিবিদ্ধ হন বলে শহরে গুজব ছড়ায়। স্থানীয় ছাত্রলীগের কিছু সদস্য দাবি করেন, মেয়রসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন।  

ওই ঘটনার জের ধরে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের বাসভবনে হামলা চালান বলে দাবি পুলিশের। গুলি ছুড়ে আনসার সদস্যরা তখন ইউএনওর বাসভবনে প্রবেশকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। 

ছাত্রলীগের দাবি, রাতের ওই ঘটনায় স্থানীয় অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ বলছে, তাদেরও তিন সদস্য আহত হয়েছেন। আনসার সদস্যরাও আহত হয়ে থাকতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

আহতদের অনেকেই শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের দেখতে রাতেই হাসপাতালে ছুটে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জানান, বুধবার রাত ২টা পর্যন্ত হাসপাতালে ২২ জন ভর্তি হন। অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যান। 

রাতের ওই ঘটনায় আহতদের প্রকৃত সংখ্যা কত তা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

বুধবার রাত ৩টার দিকে ইউএনও মুনিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আনসার সদস্যদের গুলি চালাতে আমি নির্দেশ দিইনি। আমার বাসভবনে অনুপ্রবেশকারীরা আমাকে ঘিরে ধরে। এসময় আমার নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঘটনার আকস্মিকতায় আনসার সদস্যরা গুলি চালান। বাসায় আমার বৃদ্ধ বাবা-মা করোনায় আক্রান্ত। আমার যা মানসিক অবস্থা তাতে এর বেশি আপাতত কিছু বলতে পারছি না।’  

ওই ঘটনায় বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের সামনে থমথমে পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন রাখা হয়েছে। 

ইউএনওর বাসভবনে অনুপ্রবেশের ঘটনার পর বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল, পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান, রেঞ্জ ডিআইজি এস এম আকতারুজ্জামান, জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে যান। 

বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিতে একযোগে কাজ করতে বলেছেন। মাত্রই শোক দিবস শেষ হয়েছে। এর মধ্যে এমন ঘটনা ঘটা খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। 

এ রিপোর্ট লেখার সময় (বুধবার রাত সাড়ে ৩টা) বরিশালের রূপাতলী ও নথুল্লাবাদ বাসস্টেশন এলাকায় সড়কে বাস আড়াআড়িভাবে রেখে অবরোধ করেন পরিবহন শ্রমিকরা। এ বিষয়ে শ্রমিক সংগঠনের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মেয়রকে লক্ষ্য করে গুলির প্রতিবাদে তারা অনানুষ্ঠানিক এ কর্মসূচি শুরু করেছেন বলে জানান। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এইচকে