জনবহুল শহরে লাখ লাখ মানুষের ভিড়ে আমি বড় একা। অসুস্থ শরীর নিয়ে এক বাড়িতে একা বসবাস করি। শরীরে লুকিয়ে থাকা শত শত স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা ভুলতে দেয় না সেই ভয়াল দিনের কথা। ১৭ বছরের সঙ্গী চোখের লোনা জল। এত যন্ত্রণা নিয়ে আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় বেঁচে ফেরা ঢাকা জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সাভারের মাহবুবা পারভীন। এক সময়ের বলিষ্ট নেত্রী আজ বড় অসহায়। পাশে নেই স্থানীয় কোনো নেতাকর্মী।

মাহবুবা পারভীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা। যিনি আমাকে উন্নত চিকিৎসা দিয়ে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে কিংবা সাভার আওয়ামী লীগ থেকে আমার কোনো খোঁজ খবর নেওয়া হয়নি।

২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে আমার স্বামী মারা যায়। তখন থেকে আমি একা ঘরে থাকি। ঘুম থেকে উঠে শরীরের যেসব জায়গায় স্প্লিন্টার চুলকায়, ব্যথা করে সেসব স্থানে ম্যাসাজ করে দিত আমার স্বামী। তিনি নেই। তাই যন্ত্রণা হলেও ম্যাসাজ করার লোক পাই না। আমার কোনো মেয়ে নেই। ছেলেরা তো আর ম্যাসাজ করতে পারে না।

তিনি বলেন, তারপরও আল্লাহর কাছে কোটি কোটি শুকরিয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপা বেঁচে আছেন। তিনি বেঁচে আছেন বলেই আহত নেতাকর্মীকে চিকিৎসা করাচ্ছেন। তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন। প্রতিনিয়ত তাদের খোঁজ-খবর রাখছেন।

সেই দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, সেদিন ট্রাকেই করা হয়েছিল মঞ্চ। সেই ট্রাকের চাকার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম। একের পর এক শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপা বক্তব্য শুরু করেন। বক্তব্য শেষ করার পর জয় বাংলা বলার সঙ্গে সঙ্গে বিকট একটা আওয়াজ হলো। এলাকা অন্ধকারে ছেঁয়ে গেল।

এ সময় আমার বাম পা ও বাম হাত শিরশির করছিল। আমি পড়ে যাওয়ার সময় আমার বড় ছেলে ও ছোট ছেলেকে ডাকছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল যেন দেহ থেকে প্রাণটা বের হয়ে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল মৃত্যুর আগে আমার দুই সন্তানকে দেখতে পারব না। তারপর আমি জ্ঞান হারিয়ে পড়েছিলাম।

তিনি আরও বলেন, আপনারা হয়তো দেখেছেন তৎকালীন বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রচার সম্পাদক আশিষ কুমার মজুমদার দাদা আমাকে বসাতে এমনকি দাঁড়িয়ে রাখতেও পারছিলেন না। পরে আমাকে হাসপাতালে নেওয়া হলো। সেখানে বেডে রক্তাক্ত নেতাকর্মী, ফ্লোরে রক্তাক্ত নেতাকর্মী চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছিল। এই হাসপাতালে আমার চিকিৎসা হয়নি। 

পরে আশিষ দাদার কাছে ফোন আসে, প্রফেসর কনক কান্তি বড়ুয়া দাদার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সেখানে নেওয়ার পর আমার নিথর দেহটা দেখে তিনি ভেবেছিলেন, আমি মারা গেছি। তিনি ভেবেছেন যারা বেঁচে আছে তাদের চিকিৎসা দেওয়া দরকার। মৃত মানুষকে ধরে লাভ কি। 

পরে আশিষ দাদা অনুরোধ করে আমার হাতটা তার হাতের ভেতর দিয়ে বললেন, দাদা মাহবুবা আপার দেহে প্রাণ আছে। তখন আমার চিকিৎসা শুরু করেন। চিকিৎসা চলাকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে খবর পৌঁছে, আমি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছি। আমাকে বাঁচানো সম্ভব না। 

তখন শেখ হাসিনা আপা সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন আমাকে নিয়ে বোর্ড বসানোর জন্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ডাক্তারের সঙ্গে আমার অবস্থা নিয়ে আলাপ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, যে দেশ মাহবুবাকে চিকিৎসা দিতে রাজি হবে আমি সে দেশেই পাঠাব। তিনি এখন পর্যন্ত আমার যাবতীয় চিকিৎসা করাচ্ছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ খোঁজ খবর না নিলেও মানবতার মা শেখ হাসিনা আপা আমার নিয়মিত খোঁজ খবর নেন।

এসপি