প্রবীণ নাট্যব্যক্তিত্ব মনোয়ার হোসেন আর নেই
রংপুরের প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, বিশিষ্ট নাট্যজন ও ভাষা সংগ্রামী মনোয়ার হোসেন ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার (২১ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
এর আগে শনিবার দুপুরে অসুস্থ বোধ করলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি কিছু দিন ধরে করোনার উপসর্গ নিয়ে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, চার ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
বিজ্ঞাপন
রোববার (২২ আগস্ট) মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা দুপুর সোয়া ১টায় সাতগাড়া মিস্ত্রিপাড়া জামে মসজিদের অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বাদ জোহর কেরামতিয়া জামে মসজিদ মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে মুন্সিপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
মনোয়ার হোসেন রংপুরের রাজা রামমোহন ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। তিনি অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে থেকে সংগঠনটির নেতৃত্ব দেন। নির্বাচন পর্যবেক্ষক ফেমার রংপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। সরকারি চাকরিজীবী হলেও নাটকের প্রতি তার ছিল দুনির্বার ভালোবাসা। তিনি রংপুর ও নীলফামারী জেলায় একাধিক নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। যাত্রা শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে তিনি এ্যমেচার যাত্রাদল গঠন করে প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে দীর্ঘ বছর নেতৃত্ব দেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বিগত ষাট দশকে নাট্য, সংস্কৃতি, সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্র ছাড়াও রংপুর বিভাগ, রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সংগ্রামে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। সমানতালে তিনি মঞ্চ, বেতার ও টেলিভিশন নাটকে অভিনয়, নির্দেশনা ও নাট্যকার হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছেন। তার হাত ধরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বহু শিল্পী, কর্মী ও সংগঠক তৈরি হয়েছে।
মনোয়ার হোসেন নাটকপাড়ায় ৬৫ বছরে প্রায় দেড়শ নাটকে চারশ রজনী অভিনয় ও অনেক নাটকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তার অভিনয় দক্ষতা ও সাংগঠনিক যোগ্যতা রংপুর অঞ্চলের মানুষকে সমাদৃত করে। তিনি দেশে ও বিদেশে অভিনয় করে বহুবার পুরস্কৃত হয়েছেন। তার কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ অন্তত অর্ধশত সংগঠন, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে সংবর্ধিত হওয়ার পাশাপাশি সম্মাননা স্মারক ও পুরস্কার পেয়েছেন।
সবশেষ তিনি গুণী নাট্যকার, অভিনেতা ও সংগঠক হিসেবে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির গুণীজন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। মনোয়ার হোসেন এ বছর বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন নিয়ে লেখা ‘২৮৮ দিন’ নাটকে অভিনয় করেন। এটি তার বর্ণাঢ্য জীবনে মঞ্চে শেষ অভিনয় ছিল।
মনোয়ার হোসেন ১৯৩৮ সালে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার কেতকীবাড়ি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত, জোরদার ও শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম এমকে রহমান, মা মরহুম এমএস নেছা। কেতকীবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চিলাহাটী মাইনর বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি রংপুর জিলা স্কুলে পড়ালেখা করেন। ১৯৪৮ সালে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় আবৃত্তির মাধ্যমে মঞ্চে তার হাতেখড়ি। স্কুল-কলেজে পড়ালেখার সময় থেকে সমাজ উন্নয়নমূলক কাজসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। রংপুর জিলা স্কুলে অধ্যায়নের সময়ে তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এসপি