নিখোঁজ মিরাজুল

দেড় বছর পার হলেও খোঁজ মেলেনি মালয়েশিয়া প্রবাসী পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার চৌকিবাড়ী গ্রামের দুলাল মন্ডলের ছেলে মিরাজুল মন্ডলের। ছেলেকে ফিরে পেতে বিভিন্ন স্থানে ধরনা দিচ্ছেন মা-বাবা। কিন্তু মিরাজুলের কোনো খোঁজ মিলছে না। 

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানানোর জন্য রিক্রুটিং এজেন্সিকে নির্দেশ দিলেও বাস্তবায়ন হয়নি সে নির্দেশনা। কি ঘটেছে মিরাজুলের ভাগ্যে তা ভেবে দিশেহারা স্বজনরা। এদিকে মিরাজুলের খোঁজ না পেয়ে তার বাবা-মা পাগলপ্রায়।   

জানা গেছে, পাবনা জেলার আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত ইউনিয়নের চৌকিবাড়ি গ্রামের দুলাল মন্ডলের ছেলে মিরাজুল মন্ডল। তিনি ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ২০১৮ সালের ২৮ মার্চ বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-৫৪৯) কোম্পানির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। সেখানে পৌঁছানোর পর একটি প্রতিষ্ঠানে সাধারণ কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। 

প্রথম দিকে তিনি নিয়মিত দেশে টাকা পাঠাতেন। বাবা-মাসহ পরিবারের লোকজনের খোঁজখবর রাখতেন। হঠাৎ করে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে তার সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরিবার, আত্মীয়স্বজন কেউই জানেন না, মিরাজুলের কী হয়েছে?

মিরাজুলের বাবা দুলাল মন্ডল অভিযোগ করে জানান, তার ছেলে মাঝে-মধ্যে ফোনে বলত, তার তিন রুমমেট (পাবনার মিলন, কুমিল্লার ফরহাদ ও ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সজিব) তাকে নির্যাতন করত এবং টাকা-পয়সা কেড়ে নিত। এ ছাড়া তাকে মেরে ফেলার হুমকিও দিত। 

এরপর ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি ছেলের সঙ্গে শেষবার কথা বলার পর তার আর কোনো খোঁজ পাননি। বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। মিরাজুলের বাবার দাবি, তার তিন রুমমেটই তাকে অপহরণ করে রেখেছে। মিরাজুলকে খুঁজে পেতে বাংলাদেশ সরকারের সহায়তা চেয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

মিরাজুলের স্ত্রী আলমা খাতুন  বলেন, আমি আর কিছু চাই না। সরকার যেন আমার স্বামীকে খুঁজে দেশে আনার ব্যবস্থা করে। এটাই আমার চাওয়া। 

প্রতিবেশীরা জানান, মিরাজুল একটা ভালো ছেলে। তার বিরুদ্ধে খারাপ কিছু তারা কখনো শোনেননি। তার নিখোঁজের বিষয়টি তারা মেনে নিতে পারছেন না। তার সন্ধান না পেলে কঠোর আন্দোলনে নামবে গ্রামবাসী।

পাবনা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মো. আখলাক উজ জামান বলেন, মিরাজুলের সন্ধান চেয়ে বাংলাদেশের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে তার আত্মীয়রা একাধিকবার লিখিত আবেদন জমা দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটা ব্যবস্থা করার। 

তিনি আরও বলেন, অভিযোগের বিষয়ে রিক্রুটিং এজেন্সিকে লিখিতভাবে সব তথ্য জানানোর নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা এখনো বাস্তবায়ন করেনি তারা। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিয়োগকারী কোম্পানির মাধ্যমে নিখোঁজ মিরাজুলকে খুঁজে বের করে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি তার পরিবার ও স্বজনদের।

রাকিব হাসনাত/এসপি