সনাতন ধর্মাবলম্বী প্রায় ২৩ গ্রামের মৃত মানুষকে দাহ ও সমাধি করার একমাত্র বি-কয়া সর্বজনীন মহাশ্মশানটি গড়াই নদের ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে। রাজবাড়ী জেলা কালুখালি উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের বি-কয়া গ্রামে অবস্থিত শ্মশানটি। এটি প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো।

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই গড়াই নদে ভাঙন দেখা দেয়। আবার পানি কমতে থাকলেও একইভাবে ভাঙতে থাকে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তেমন কোনো নজর নেই এই শ্মশান রক্ষায়।

সোমবার (২৩ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা যায়, শ্মশান এলাকায় নদীর পানিবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। মৃত মানুষের দাহ ও সমাধি করার জায়গায় নদীর পানি উঠে গেছে। শ্মশানের ঘরেও নদীর পানি ঢুকতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে শত শত সমাধিস্থল।

প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এ শ্মশানটির সর্বশেষ সংস্কার করা হয়েছে ২০১৬ সালে। আশপাশের প্রায় ২৩ গ্রামের মানুষের একমাত্র দাহস্থান এটি। এলাকার ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহন করে চলেছে বি-কয়া সর্বজনীন মহাশ্মশানটি।

স্থানীয়রা বলেন, আমাদের ২৩ গ্রামের মানুষকে সৎকার করার একমাত্র শ্মশান বি-কয়া সর্বজনীন মহাশ্মশান। তাও এবার নদীগর্ভে বিলীন হতে বসেছে। এর আগেও ভাঙনে অনেক সমাধিস্থল নদে চলে গেছে। কিন্তু এবার এই শ্মশানের পুরোটাই বিলীন হতে পারে।

তারা আরও বলেন, এটি ধ্বংস হলে আমাদের কষ্টের শেষ থাকবে না, কারণ অন্য ধর্মের মানুষ ইদানীং কারও বসতবাড়ির আশপাশে মৃত মানুষ পোড়াতে দেয় না। যদিও আমরা নিজেদের জায়গাতে পোড়াতে যাই, তবু তাদের আপত্তি থেকেই যায়।

সাওরাইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ছোট থেকেই এলাকার বৃদ্ধদের কাছে শুনেছি, প্রায় ২০০ বছর আগে এই শ্মশান স্থাপিত হয়েছিল। এটি প্রতিবছরই ভাঙে। দুই বছর আগে এখানে কিছু জিওব্যাগের কাজ করা হয়েছিল। ২০২৬ সালে শ্মশানটির উন্নয়নকাজ করা হয়েছে। অতিদ্রুত ভাঙন রোধ করা না হলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে শ্মশানটি।

জিওব্যাগ দিয়ে কোনোভাবেই ভাঙন রোধ করা সম্ভব না। শুধু সরকারের টাকা অপচয়। ব্লক দিয়ে নদীতে বাঁধ দেওয়া হলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব বলে জানান তিনি।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আহাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছর জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করা হলেও আশানুরূপ ফল হয়নি। এবারও জিওব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধ করা সম্ভব হবে না। তবে বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। সরেজমিনে দেখে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মীর সামসুজ্জামান/এনএ